ইংরেজি অনুবাদ: ক্যাটরিনা ডডসন
তার নাম ছিল আলমিরা, মেয়েটা অনেক মোটা হয়ে গিয়েছিল। এলিস ছিল তার সব থেকে প্রিয় বন্ধু। অন্তত সবাইকে সে দুঃখ করে এই কথাই বলতো। অন্য মেয়েটির পক্ষ থেকে বন্ধুত্বের অভাব ছিল, তার নিজের তরফের প্রচণ্ডতাই যথেষ্ট সেটুকু পূরণ করে দিতে সক্ষম এই রকম কোনো একটা ইচ্ছা থেকে।
এলিস তার কথা না শুনে অন্য দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে টাইপ করছিল।
এলিসের পক্ষ থেকে বন্ধুত্ব যত অস্তিত্বহীন হচ্ছিল, আলমিরার পক্ষ থেকে তা ততই গাঢ় হচ্ছিল। এলিসের মুখটা গোলগাল, মখমলের মতন। আলমিরার নাক সবসময় চকচক করতো। আলমিরার চোখেমুখে সবসময় একটা উদগ্রতা থাকত যেটা সে কখনোই লুকানোর চেষ্টা করতো না: খাবারের ক্ষেত্রেও তার একই মনোভাব ছিল, পৃথিবীর সাথে তার সবচেয়ে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ।
এলিস কেন আলমিরার সাথে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছিল, তা কেউ ব্যাখ্যা করতে পারতো না। দুইজনেই টাইপিস্ট এবং সহকর্মী ছিল, কিন্তু সেটা এই ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। দুইজন একসাথে দুপুরের খাবার খেত, এই ব্যাখ্যাও যথেষ্ট নয়। দুইজনে একই সময়ে অফিস থেকে বের হতো এবং একই লাইনে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতো। আলমিরা সবসময় এলিসের খেয়াল রাখতো। আর এলিস একটু দূরত্ব বজায় রাখতো, একটু উদাস, সবাই তাকে ভালবাসবে এই আকাঙ্ক্ষায়। এলিস ছিল ছোটোখাটো ও কোমল। আলমিরার মুখটা বেশ চওড়া, পাণ্ডুবর্ণ আর উজ্জ্বল: তার লিপস্টিক কখনোই ঠিক থাকতো না, সে ঐ ধরনের ছিল যারা না বুঝে লিপস্টিক খেয়ে ফেলত।
“আমার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেডিও প্রোগ্রামটা দারুণ লেগেছে,” আলমিরা এরকম কিছু একটা বলে এলিসকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করতো। আর এলিস এই সব তার প্রাপ্যই মনে করতো, এই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অপেরাসমেত সবকিছু।
আসলে আলমিরা প্রকৃতি ছিল কোমল, ঐ মস্ত গোল দেহটা সমেত। একটা বাজে কথা বলে ফেললে সেটার জন্য অনুতপ্ত হয়ে সারা রাত নির্ঘুম পার করে দিতে পারতো। কিছু একটা অন্যায় করেছে এই রকম ধারণা হবার সাথে সাথে তার মুখের সুস্বাদু চকোলেটের টুকরাটাও তার বিস্বাদ লাগতো। তার ব্যাগে সব সময় চকোলেট থাকতো, আরেকটা জিনিসের অভাব ছিল না, সেটা হলো কখন কী খারাপ করে ফেলে তার জন্য সতর্ক ভাবনা। সে যে দয়ালু এমন না, সম্ভবত দুর্বল দেহে দুর্বল স্নায়ুর ফল।
যেদিন সকালে ঘটনাটি ঘটে, আলমিরা অফিসে কাজের জন্য তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে গিয়েছিল একটা রুটি চিবোতে চিবোতে। অফিসে পৌঁছে সে এলিসের ডেস্কের দিকে তাকিয়ে দেখল এলিস তখনো আসেনি। এক ঘণ্টা পরে এলিস আসলো রক্তিম লাল চোখ নিয়ে। সে আলমিরার প্রশ্নের উত্তর দিতে বা ব্যখ্যা করতে চাইছিল না। আলমিরা তার টাইপরাইটারের উপর ঝুঁকে বাস্তবিকই কান্না করে দিচ্ছিল।
শেষমেশ দুপুরের খাবারের সময়। সে এলিসকে খুব করে অনুরোধ করলো তার সাথে খাবার জন্য, সে খাওয়াবে।
ঠিক দুপুরের খাবারের সময়ই ঘটনাটা ঘটেছিল।
আলমিরা কী ঘটেছিল তা জানার জন্য ব্যাকুল হচ্ছিল। কেনইবা এলিসের অফিস আসতে দেরি হলো, কেনইবা তার চোখগুলো ওরকম রক্তলাল। নিরুৎসাহী এলিস খুব একটা উত্তর করছিল না। আলমিরা খুব উদগ্র হয়ে খাচ্ছিল আর কী হয়েছে তা জানার জন্য চাপাচাপি করতে থাকলো, চোখ জলে ভরা, ছলছল।
“ধুরু মুটকি!” ক্রোধে নীরক্ত এলিস, “তুই আমাকে একটু মাফ করতে পারিস না?”
আলমিরার গলায় খাবার আটকে গেল, কথা বলার চেষ্টা করলো, তোতালাতে থাকলো। এলিসের নম্র মুখ নিঃসৃত বাক্যাবলি আলমিরা জি ডে আলমেইডার খাবারের সাথে মিলে গলা দিয়ে আর নামছিল না।
“তুই একটা আপদ, একটা অনধিকারচর্চাকারী।” এলিস আবার ফেটে পড়লো। “তুই জানতে চাস কী হয়েছে তাই না? ঠিক আছে, আমি তোকে বলছি। কীট কোথাকার: জেকুইনহা পোর্তো আলেগ্রেতে চলে গেছে, আর কখনো ফিরবে না। খুশি হইছিস মুটকি?”
আসলেই যেন এই শেষ কিছু মুহূর্তে আলমিরা আরেকটু ফুলে গিয়েছিল, তখনো তার মুখ ভর্তি খাবার।
ঠিক তক্ষুনি যেন আলমিরা ঐ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করলো। এবং একটা পাতলা মেয়ের মতন, কাঁটাচামচটা হাতে নিল, এবং এলিসের ঘাড়ে বসিয়ে দিল। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, রেস্টুরেন্টের সবাই এক সাথে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কিছু মোটা মেয়েটা, ঐ ঘটনার পরেও শুধু মাটির দিকে তাকিয়ে বসে ছিল, অন্য মেয়েটার রক্তের দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি।
এলিসকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওখান থেকে ব্যান্ডেজ নিয়ে ছাড়া পেলো, চোখমুখে তখনো ভয়ের কাঁপন। আলমিরাকে ঘটনাস্থলের গ্রেপ্তার করা হয়।
কিছু প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে সবসময়ই কোথায় যেন একটা সমস্যা ছিল। পরিবারের বন্ধুগোত্রীয় যারা, তাদের মনে পড়লো আলমিরার দাদির কথা, ডোনা আলতামিরান্দা কেমন অদ্ভুত নারী ছিলেন। কারোরই এটা মনে হলো না যে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মোটা মোটা পাগুলো থাকা সত্ত্বেও হাতি খুবই সংবেদনশীল প্রাণী।
জেলের ভিতর আলমিরা ছিল খুবই অনুগত এবং উৎসাহী, সম্ভবত একাকীত্ববোধে আক্রান্ত, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই প্রসন্নচিত্ত। সে তার সাথের সবাইকে সাহায্য করতো। শেষমেশ তার বন্ধু হলো। সে কাপড় ধোয়ার দায়িত্বে ছিল। গার্ডদের সাথেও ভালো সম্পর্ক হলো, তারা মাঝে মাঝেই ওকে চকোলেট বার দিতো। ঠিক সার্কাসের হাতির মতো।