"...মুখটার দিকে তাকিয়ে দেখো
একটু সচেতন হলেই দেখতে পেতে
গ্যাস চ্যাম্বারে তোমার মায়ের মুখ
রাইফেলের প্রয়োজন ফুরোতো
তুমিও বলতে পারতে-
এভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না কারো পরিচয়..."
(একজন খুনীর প্রতি) / অবরোধকাল - মাহমুদ দারবিশ (রামাল্লা, জানুয়ারি ২০০২)
জেরুজালেম ভ্রমণ নিয়ে একটা পুরনো বই পড়েছিলাম কিছুদিন আগে, ভারতে কর্মরত এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার। কোলকাতা থেকে অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত সেই আমলে। গ্যালিলির সমুদ্র, বেথলেহেম, নাজারেথ, এই সব গ্রাম, ভূমধ্যসাগর হতে দেখা ও পরে কাছ থেকে দেখা জুডিয়ার গ্রাম-পাহাড়গুলির রোমান্টিক বর্ণনা আছে সেখানে। ইজরায়েল পাসপোর্টে না থাকলেও, ইউটিউবের যুগে ইজরায়েল ভ্রমণ সম্ভব। আল জাজিরা বা বিবিসি/সিএনএনও আপনাকে তাদের মতন জেরুজালেম নিয়ে যাবে, পর্যটকেরাও নিয়ে যাচ্ছেন। ইজারায়েল নাই বললেই তো আর নাই হয়ে যায় না।
"দ্রাক্ষালতা, জর্ডাননদী, কাঠ, কাঠবাজার
কাঠবাদামের গাছ, গ্যালিলির সমুদ্র, ঝাঁকাভরা
মাছ, মাছবাজার, ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে
প্রতিশ্রুত স্বপ্নভূমি।"
আমাদের কল্প জগতের আর বাস্তব জগতের ইজরায়েল বা জেরুজালেম ভিন্ন। এর মধ্যে পশ্চিম তীর আর গাজা এই দুই মোটেও রোমান্টিক না, পুরোপুরি রগরগে বাস্তব। ইজরায়েল পার্লামেন্ট, তাদের ফুটবল দল, তাদের খৃষ্টান ও মুসলিম জনগণ, গণতান্ত্রিক রীতিপদ্ধতি, তাদের জাতীয়তাবাদ, বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ, গোলান উপত্যকা, অবশিষ্ট প্যালেস্টাইন ও তার বাসিন্দাগণ, সেটেলার ইত্যাদি ইত্যাদি অভিনব। ইতিহাসের তুলনায় এর অভিনবত্ব হয়ত খুব বেশি না। আর অভিনব অনেক কিছুই হয়ত এই মুহূর্তে ঘটছে, গাজা বা পূর্ব জেরুজালেমের সংযুক্ত ভূখণ্ডেই পাওয়া যাবে। হয়ত কোনো এক পরিচয়ের সূত্রে গেঁথে ফেলা কঠিন না।
পরিচয় নিয়ে দারবিশের একটা কবিতা আছে। কি আপনার পরিচয়? প্যালেস্টাইনের মানুষ? আরব? ইজরায়েল ভূখণ্ডের মানুষ? মুসলমান / খ্রিস্টান / ইহুদী? পরিচয় মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, হাজার হাজার বছর ধরে। এখনো, কোথায় পরিচয়ের যন্ত্রণা নেই? রাজনৈতিক সংখ্যাগুরু বা ক্ষমতা বলয়ের বাইরে যে কোনো ভূখণ্ডে বা এই বিশ্বে এমন কোনো "পরিচয়" আছে যা আমাকে আপনাকে নিরাপত্তা দিবে? কিংবা গ্লানিহীন রাখতে সক্ষম হবে? মানব পরিচয়? সে তো অনেকে মানতেই রাজি না। তাহলে কিসের মধ্যে পরিচয় খুজছি আমরা?