Saturday, June 13, 2020

বিটুইন দ্য ওয়ার্ল্ড এন্ড মি

The truth is that the police reflect America in all of its will and fear, and whatever we might make of this country’s criminal justice policy, it cannot be said that it was imposed by a repressive minority. The abuses that have followed from these policies—the sprawling carceral state, the random detention of black people, the torture of suspects—are the product of democratic will.



অনুন্নত একটি জাতি/সম্প্রদায় কীভাবে নিজের উন্নতি করতে পারে যেখানে রাষ্ট্র হলো প্রধান অন্তরায়। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে কালোমানুষদের ইতিহাস, স্থানীয় আদিবাসীদের ইতিহাস অত্যন্ত বেদনার। আজকের এই সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে এইসব মানুষের অস্থির উপরে। রক্তের দাগ এখনো মুছে যায় নাই। তিরিশের দশকের অর্থনৈতিক মন্দার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কাটিয়ে উঠা জাতি যখন নিউ ডিলে উজ্জীবিত হয়ে সামাজিক উন্নতির সোপানে উঠে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে তখনো কালোদের জন্য সবখানে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করা। যুগে যুগে এই সব কালো মানুষদের পরিত্রাতা হয়ে এসেছে, ধর্ম, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি। মার্টিন লুথার কিং বা ম্যালকম এক্স এর মতন মহান নেতারা এসেছেন, তার যুগপৎ আন্দোলনে সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কালান্তরে এই সব পরিবর্তন একই সাথে স্বাভাবিক এবং বৈপ্লবিক দুই ভাবেই প্রতিভাত হয়। কেউ কেউ বলেন, এই সব এমনি এমনি হবে। এমনি এমনি কিছু হয় না।

আমেরিকা যখন প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে, তখন আমাদের মনে আশাবাদ জাগে, যে এমনি এমনি অনেক কিছুই হয়ে যাবে। আমেরিকার নিউ লিবারেলিজমের সুপার মডেল ওবামা কালোদের জন্য কী বলছেন? তাদেরকে বলছেন, ইতিহাস থেকে দায় মুক্তির সময় চলে এসেছে, মুক্তিবেগ অর্জন করা হয়ে গেছে, এখন উড়ে যাবার সময়। আদতে কী হয়েছে? তা-নেহিসি কোতস বলছেন,
"White America’ is a syndicate arrayed to protect its exclusive power to dominate and control our bodies",
আমাদের মনে করিয়ে দেয় সাদা হাতির কালা মাহুতের কথা। প্রেসিডেন্ট ওবামা কালোদের ব্যাক্তিগত পর্যায়ে দায়িত্বশীল হতে বলছেন, কোতস এই জায়গায় দ্বিমত করছেন।



Amherst College | Ta-Nehisi Coates to Speak at Amherst College on ...









বিটুইন দ্য ওয়ার্ল্ড এন্ড মি, কোতসের নন-ফিকশনধর্মী লেখা। চিঠি আকারে লিখেছেন তার ছেলে কে। শুরুতেই বলেছেন, মানুষ হিসেবে আমরা কীভাবে আমাদের শরীর ও তার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হতে শুরু করি। একজন কালো মানুষ আর একজন সাদামানুষ এই নতুন আমেরিকাতে তাদের যার যার শারীরিক নিরাপত্তার কী ধরণের ভিন্ন ধারণা নিয়ে তৈরী হতে থাকে। বালটিমোর এর কথা যখনই শুনি, মনে আসে এক ধরণের হানাহানির চিত্র। এই চিত্রটা আমাদের কে খানিকটা দিয়েছে হলিউড। বানোয়াট বলবো না, কিন্তু ঐ চিত্রের ভেতরে হানাহানির মধ্যে একজন কালো মানুষের শরীরের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অত চিন্তিত নই যতটা নিজেকে নিয়ে চিন্তিত। আমরা মানে উপমহাদেশের লোকেরাও তো কালো, নাকি একটু আলাদা? নাকি বাদামী বা খয়েরি। আমাদের ইতিহাস কেমন? আমাদের শরীরের নিরাপত্তা কতটুকু দিচ্ছে আমেরিকার রাষ্ট্র? বালটিমোরের বাংলাদেশীদের চোখের বিষ কারা? রাষ্ট্র নাকি কালোমানুষ?

আমাদের সুবিধা হয় কিছু প্যারালাল তৈরি করতে পারলে। খাগড়াছড়ির উপত্যকায় চাকমা বা বাঙালির শরীরের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে এবং সেখানে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা নিয়েও ভাবা যেতে পারে। এখানেও ইতিহাসের মুক্তিবেগ অর্জিত হবার নয়।

মুক্তিবেগ ব্যাক্তিগত পর্যায়ে অর্জিত হবারও নয়, আর জাতিগত পর্যায়ে হতে হলে আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই, ইতিহাস নিজেই এই বিষয়ে প্রচুর সাক্ষীসাবুদ যোগান দেয়, মানতে চাননা শুধু নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবা লোকজন। কোতসের এই বইটা তিনটা অধ্যায়ে লিখিত। এখানে ডাঃ জোনস নামের একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর কথা আছে, যিনি নিজে বর্গাচাষী বা sharecropper এর সন্তান হয়েও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন, একটা বড় হাসপাতালের প্রধান রেডিওলজিস্ট হিসেবে। শেয়ারক্রপার এর ইতিহাসও সেই আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ও ততপরবর্তী দাসপ্রথা বিলোপের ইতিহাসের দিকেই টান দিবে। ইতিহাস থেকে মুক্তি নাই, বেগও নাই। তো দেখা যাচ্ছে, এই ডাক্তারের সন্তান যাকে তিনি সব রকমের নিরাপত্তা দিয়ে বড় করে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন, যুবক বয়সে সেই ছেলে নিহত হলো আমেরিকার পুলিশ বাহিনীর গুলিতে, বিনা দোষে অথবা তার গায়ের রঙ এর কারণে। ওবামার আট বছরের শাসনামলে এরকম অনেকগুলি ঘটনা পাওয়া যাবে, পুলিশ বা শ্বেতাঙ্গের হাতে নিহত হবার ঘটনা, অত্যাচারিত হবার ঘটনা। কোতসের সাথে ওবামার দেখাও হয়েছিল, এবং এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনায় দ্বিমতও তৈরি হয়।



বইটি শুরু হয় কোতসের নিজের ছোটবেলার কাহিনী দিয়ে। বালটিমোরের রাস্তা এবং স্কুলের অসারতা দিয়ে। বালটিমোরের বিদ্যালয় রাস্তায় ছুড়ে দেয়, আর সহিংস সেই রাস্তায় নিজেকে বাঁচাতে বা বাঁচতে গিয়ে একজন বালক এর মনোজগত কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করে ফেলে। আমেরিকান ড্রিম এর এও এক ন্যারেটিভ। কোতসের পিতা মারধোর করতেন ছেলেকে, পুলিশ বা রাস্তার সহিংসতা থেকে বাঁচাতে। সেখানে তার জন্য মুক্তিবেগ এনে দেয়ার মতন ছিল বই। বাবা ছিলেন লাইব্রেরিতে। কোতস বই এর জগতে ঢুকে গেলেন। ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতির পড়াশোনায়। ছেলেকে বলছেন,

"You must always remember, that the sociology, the history, the economics, the graphs, the charts, the regressions all land, with great violence, upon the body."

এরপর কোতস একে একে বলছেন তার মক্কা, হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনার অভিজ্ঞতা, তার স্ত্রীর সাথে দেখা হওয়া, সন্তান জন্ম দেয়ার কথা। নিউওয়র্ক বা প্যারিসের অভিজ্ঞতা। সেখানেও ইতিহাস, ইতিহাসের মুক্তিবেগ, আফ্রিকার পিছুটান, জাতিপরিচয়।



বইটার বর্ণনাশৈলী কবিতার মতন, কিন্তু বাস্তব। লেখক বার বার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে না করছেন। সেই স্বপ্নগুলি কাদের জন্য, কারা তৈরি করছে সেগুলি দেখতে বলছেন। সেই ছোটবেলায় তার দাদী তাকে নানান প্রশ্নের উত্তর নোটবইয়ে লিখতে দিতেন, সেখান থেকে তার লেখার শুরু, প্রশ্নের শুরু, স্বপ্নকে, জীবনকে, জীবনের নিরাপত্তাকে প্রশ্ন করা শুরু। কী এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায় এই অন্য শরীরগুলি আমরা কী কোনোদিন জানতে পারি?