Monday, April 30, 2018

সাধুসঙ্গ

ইহা একটি ফটোব্লগ, কথা কম, ছবি বেশি!
ইদ্রাকপুর কেল্লার ভিতরে। মুন্সিগঞ্জ সদর। গুলিস্তান থেকে দীঘির পাড়ের বাসে উঠে, সদর, সেখান থেকে অটো করে ৫-১০ টাকায় পুরান কাচারি। দেয়াল উচু, গেট বন্ধ।অগত্যা বেয়ে পার হয়ে যেতে হলো।
ইদ্রাকপুর কেল্লার সিড়ি। তেমন কিছু নেই, একটা সুরঙ্গ মতন আছে, এই আর কি! কোন এক কালে নদী পাহারা দেয়ার জন্য তৈরী। এখন উপর থেকে আর নদী দেখা যায় না। মোক্তারপুর ব্রিজ পার হবার সময় অসংখ্য চিমনি দেখা যায় রাইস মিলগুলির। বাংলায় ধান সিদ্ধ করার কল। 



দীঘির পাড়ের বাস থেকে ভালো সমাধান, ট্রেন বা বাসে চাষাড়া বা ফতুল্লা গিয়ে, সেখান থেকে সিএনজি নেয়া। সময় বাঁচবে, টাকা একটু বেশি খরচ হবে। মুশকিল হল গেন্ডারিয়া থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত বাস রাস্তা এপ্রিল ২০১৮, এই সময়ে জঘন্য ছিল। আমরা মুন্সিগঞ্জ ঘাটে, পোয়ামাছ আর গরুর মাংস দিয়ে দারুন খাওয়া দাওয়া করেছিলাম, দেখলাম ভালোই সময় আছে, মোক্তারপুর ব্রিজ থেকে রিজার্ভ অটো নিলাম, প্রথম বজ্রযোগিনী, এর পরে সিরাজদীখান, ৩৫০ টাকা চাইলো। এই ছবিটা অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞানের জন্মভিটায়। সেখানে এক ভিক্ষু সন্ধান দিলেন, বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহার দেখে যেতে।
বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহার, বজ্রযোগিনী গ্রাম। দারুন সে গ্রাম, মাছরাঙ্গা, ভুট্টা, শসা ক্ষেতে দেখে দেখে পৌছে গেলাম সেখানে, অল্প ধ্বংসাবশেষ আছে। সংস্কার করা হয়েছে, জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাজ।

এটা এমনি, বসার জায়গা। নতুন করে একটা ঘর বানানো আছে, এগুলি মনে হয় দর্শনার্থীদের জন্য। 

সিরাজদীখান বাজারে মিষ্টি দারুন। মা ক্ষীর ভান্ডার! সেখান থেকে অটো নিয়ে রামানন্দ গোরস্তান। তার পাশ দিয়ে ক্ষেতের আইল ধরে এই ঘাটে। পদ্মহেমের ঘাট। আইসা পড়ছি। কি দারুন শান্তির জায়গা।
তিলের ক্ষেত, পদ্মহেমের পাশে। আমি শুরুতে ভেবেছিলাম কালিজিরা। একটা দুইতলা কাঠের ঘর, মুন্সীগঞ্জের সমগ্র এলাকার বৈশিষ্ট্য বোধ করি। ক্ষেতের ঐপারে একটা মসজিদ আছে।

আখড়ার উপরে এমন কৃষ্ণচূড়া, প্রকৃত চূড়াই। আমরা ততক্ষণে অধিবাস অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। বাউল তরিকার ব্যাপার স্যাপার, বৈষ্ণবদের সাথে মিল আছে, এখানকার প্রবীন গুরু নিরামিষ ভোজী, বেশ!

মেলার মাঠে। আমরা এসে বেশ একটা সাঁতার দিলাম, পাশের নদীর অল্প জলে। জল স্বচ্ছ, শীতল, কাঁদা একটু কম আর জল আরো বেশি হলে, আনন্দ অনেক গুণ হতো, তবু যাই হলো তা কম নয়, দুয়েক জায়গায় গলা জল, অঠাঁইও পাওয়া গেল। 

সূর্যাস্তের সময়। আমরা বেশ খানিক সময় এখানে বসেই কাটালাম দীপুর অপেক্ষায়। এর মধ্যে ঢাকা থেকে আসা তরুনেরা, যারা ঠিক বাউল তরিকার না, আবার আমাদের মতন শুধু ঘুরতে আসেনি, এরা গিটার বাঁশি সহযোগে বাদ্য বাজনা করলো। সুন্দর পরিবেশ বাদ্য বাজনার জন্য। আযান শুরু হইতে, মেলা থেকে কয়েকজন বোরকা পড়া মহিলা এসে বাদ্য-বাজনা আযানের দোহাইয়ে থামাইতে বললেন।

মাঠখানা।খুবই সুন্দর তার ঘাস। সন্ধার পরে ভেবেছিলাম, এখানেই বসে থাকা যাবে। তা হয়নি, প্রচন্ড শিশির পরে, সব ভিজে একাকার। 

সন্ধ্যার গান আরম্ভ হলো। শুরু করলেন প্রবীন গুরু।একে একে অন্যরা, মাঝে শফি মন্ডল, শেষে আনন্দনগর। সাউন্ড সিস্টেম কিছু গোলমাল ছিল, আর ভয়ানক উপস্থাপিকা, ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, বিকেলে অধিবাসের সময়ও ছিলেন। 

আনন্দনগর যতক্ষণে গাইতে আরম্ভ করেছে,ততক্ষণে আমরা মঞ্চে, গান গাইতে নয়। বটগাছে হেলান দিতে। শফি মন্ডল আর আনন্দনগর মোটামুটি পচা সাউন্ড সিস্টেম একটু ঠিক ঠাক করে নিয়েছিল। আনন্দনগর হলো জলের গান থেকে রাহুল আনন্দ কে বাদ দিয়ে সাথে কবির হোসেন ফাউ। খমক, দোতারা আর ভোকার ভালৈ।  

সকালে পায়ে হেটে বালুচর। সেখান থেকে ট্রলারে ফতুল্লা। রাতের বাদশাহ ভোগ আর ক্ষীরসার পরে ভোর রাতে খিচুরী সেবা। সকালে কি আনন্দে বাইর হইলাম, আহা, অল্প একটু ঘুমও হয়েছিল।

ট্রলারে ফতুল্লা। অনেক গুলি ইন্টার পরিক্ষার্থী ছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস - এই ধরণের একটা পরীক্ষা হবে।

আহার, মস্তক ও কর্ণ। রাতে যেখানে ঘুম হইল।