Sunday, November 03, 2013

বার্ডস অফ ব্রিসবেন / Bards of Brisbane

সৃজনশীল সাহিত্যের অধ্যাপিকা ব্রাউনিন লী সম্বন্ধে আমার সহচর এডামের মন্তব্য, “…she has nice boobs!” লী শুরু করলেন, “আমি কিছু বছর আগে শ্রীলংকায় ছিলাম...।” মারফি’র অনুবাদ আর লী’র অনুবাদে আমি খুব বেশি পার্থক্য পেলাম না, আদৌ সমসাময়িক ভাষান্তর বলতে আসলে সে যা বুঝাচ্ছে তা বুঝতে পারলাম না। যেটা জানা গেলো তা হলো সাধারণ মানুষের কবিতা, যে কবিতার বেশিরভাগ লেখা হয়েছে, ক্লান্ত-অবসন্ন দেহে, বিমুগ্ধ-প্রসন্ন মননে। আসলেই কি ওগুলি কবিতা? একজন লিখেছেন, “আমি বুধাল...আর সবাই কবিতা লেখারই চেষ্টা করে, আমি করিনি...।”

এরকম সহস্রাধিক প্রস্তর খচিত পংক্তি পাওয়া গেছে শ্রীলংকায়। একজন সিংহ্লীর সাথে কথা হলো, তার মতে “সিগিরিয়া” হলো অষ্টমাশ্চর্য! তার কাছে আশ্চর্যের বিষয় হলো পাথুরে দুর্গটির স্থাপত্য। এরই দেয়ালে অংকিত রমণীয় সব নারীমুর্তি । “সিগিরিয়া” অর্থ সিংহের পাথর। পুরাণ বলে এক সিংহের ঔরসে ভারতীয় রাজকন্যার গর্ভজাত সিংহলবাসীরা সিংহ মানব। যদিও তথাকথিত সঙ্গমটি ছিল “ধর্ষণ”। সিগিরিয়ার ঐ পাথর উপর্যুক্ত সিংহের ছিন্ন মস্তক মনে হতে পারে, আবার বিকটকায় শিবলিঙ্গ বলেও মনে হয়।

পঞ্চম শতাব্দীর পাথুরে প্রাসাদের ভগ্নাবশেষের পাশ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা নদী গিয়ে পড়েছে ভারত মহাসাগরে। এখানে এক সময় চাষবাসও ছিল। অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে ঐ রমণী মুর্তিগুলি নিয়ে। কশ্যপ নামের এক নরপতি তার পঞ্চশত ভার্যার মুর্তি অঙ্কিত করে থাকতে পারে। কশ্যপ পিতৃহত্যা করে তার অপ্রাপ্য সিংহাসন লাভ করে, এবং সহোদরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এই দুর্গ নির্মান করে। যুদ্ধে পরিত্যক্ত  ও পরাজিত  হয়ে আত্মহত্যা করে কশ্যপ। তার পিতাকে জীবিত দেয়াল চাপা দিয়ে হত্যা করেছিল সম্ভবত। এর পর বৌদ্ধ আমলে কশ্যপের এই কীর্তি অখ্যাতির আড়ালে চলে যায়।

পর্যটকের আনাগোনা ছিলই। ছিল পথিকের আনাগোনা। পাথর বেয়ে এই গুহাগুলিতে এসেই পথিকের চোখ পড়ত ঐ অঙ্কিত দেয়ালে উপর। সবই নারীমূর্তি, কামকলারত-অনেকটা অজন্তা-ইলোরার পটগুলির মতন। সবগুলি অক্ষত নেই, বহুবার এগুলিকে নষ্ট করার চেষ্টাও করেছে বহুজনে। তবে এখন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত।

কবিতাগুলি লেখা হয়েছিল অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে। বণিক, রাজকর্মচারী, সাধারণ পথিক থেকে শুরু করে বৌদ্ধ সন্নাসী সবাই লিখেছেন ঐ কামিনীবর্গকে উদ্দেশ্য করে। বেশিরভাগ পুরুষ, তবে বারজন লেখককে নারী বলে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা গেছে, এবং তাদের লেখাগুলিই উৎকৃষ্ট কবিতা। দুজন আবার নিজেদের কবি বলে দাবি করেছেন। পথক্লান্ত লেখক লিখেছে, “সে সময়কে থামিয়ে দিল, আমার বিষন্ন সময়...আমি কি এখন ঘুমোতে পারি না...?” অথবা “পাথরের শুণ্যতাকে সার করে দিয়ে যায় ইন্দ্রের অপ্সরীরা...”।

সবগুলি কবিতাই সাংকেতিক। প্রায় অমিত্রাক্ষরে রচিত। স্বর্ণাঙ্গ-নিলাক্ষীদের স্তবে রচিত এইসব কবিতা যে মৌলিক তা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই লেখকের নিজের সংস্কৃতি থেকে ধার করা উপাদানও পাওয়া গেছে।

কয়েকটি কবিতা, যেগুলি আমি মারফি’র অনুবাদ থেকে ধার করেছিঃ

১.
এরই মাঝে কোনো কোনো চেহারার
দুঃখে বিকার
নিভু নিভু কণকের উচ্ছ্বাস
কবেকার-

এই সব
এক দিন ছিল,
তাহাদের সুদিনে
“প্রিয় নাম ধরে ডাকিবার”।

২.
উত্তম প্রেমিকের
কি আছে প্রয়োজন
ভালোবাসিবার,
রমণীর প্রিয়গুণে-?

রইবে না স্থির
মহাসমুদ্রের কল্লোল
উত্থিত সকায়া
পূর্ণ চন্দ্রকিরণে।

৩.
তোমরা যারা এখনো
প্রত্যগ্র পাথরের 'পর
ভাবতেই পারো


"অনন্ত যৌবনে
আমরাই বর্তমান
পাই না তো দেখা

সে পুরুষ, যে ভালোবাসে
মরে নাকো
সংহারিলে।"

৪.
হ্যা
সে সুন্দর
কোন কালের কুশলী
কালান্তরে পথ ভুলে
বিশ্বাস সন্দেহের দ্বন্দ্বে
উত্তাপ ছড়ায় না তনু
অগোচরে রয়ে যায়
তার প্রায়-
দগ্ধ
হৃদয়।

[পুরানো লেখা, সামু ব্লগ থেকে নেয়া]