Saturday, March 09, 2013

হোয়াইট হাউজের কাছে জামাত-শিবিরের আর্জি: জালিয়াতি ও ভুয়া ইমেইল এর মাধ্যমে বাটপারি প্রশিক্ষণ

 ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখে ওবামা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে "Express concern against International War Crime Tribunal and Mob Justice in Bangladesh" নাম দিয়ে একটা আর্জি/পিটিশন পেশ করা হয় এইখানে (https://petitions.whitehouse.gov/petition/express-concern-against-international-war-crime-tribunal-and-mob-justice-bangladesh/6gg04svt)। পিটিশনটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল এর বিপক্ষে। Mob এর বাংলা দাড়ায় হুড় জনতা, Mob Justice এর মানে করা যায় শাহবাগের উচ্ছৃংখল জনতা যে বিচার চাইতে জড়ো হয়েছে। অর্থাৎ এই আর্জি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল ও শাহবাগের বিপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে। সেইটা ঠিক না কি ভুল হচ্ছে তা আমাদের আলোচ্য বিষয় না। আমরা এই পোস্টে, জামাত-শিবির কিভাবে তাদের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে, এই আর্জির বিষয়ে গণহারে মানুষকে বাটপারি করার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে তা প্রমান করব। তাদের ওয়েব সাইটে তারা মানুষ কে শেখাচ্ছে কিভাবে ভুয়া ইমেইল এড্রেস কিভাবে তৈরী করতে হয়, এবং কিভাবে সেই ভুয়া ইমেইল এড্রেস দিয়ে হোয়াইট হাউজের সাইটে ভুয়া একাউন্ট তৈরী করে আর্জি পেশ করার পক্ষে জাল-স্বাক্ষর দেয়া যায়। তাদের এই জালিয়াতি অপরাপর বিষয়ে তাদের জালিয়াতির সাথে সংগতিপূর্ণ এবং তাদের প্রকৃত চরিত্রের সাথে মিলে যায়। আসুন একেক করে নিরীক্ষণ করি।

প্রথমেই আমরা জামাত এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্র-শিবিরের একটা ওয়েব সাইট থেকে নেয়া স্ক্রিনশট লক্ষ্য করি। এটি (http://shibir24east.blogspot.com/) দুই দিন আগেও পাবলিক এর কাছে খোলা ছিল, আমরা যখন এটা ধরতে পেরে বহির্বিশ্বের কাছে প্রচার চালাচ্ছিলাম, ঠিক তখন এরা এই সাইটটি লুকিয়ে ফেলে (সচলায়তনে আগের পোস্ট: http://en.sachalayatan.com/enamulhoque1/48372)। ওদের ব্লগের একটা স্ক্রিন শট পাবেন এই খানে (http://i.imgur.com/Cu1fEyf.jpg)। দেখুন, এই বাটপারেরা উপরে লিখে রেখেছে, "সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির অঙ্গীকার" আর নিচেই কিভাবে বাটপারি তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সেও দেশের বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষর দেয়ার জন্য।


বাটপারির পাঁচ ধাপ (সংক্ষেপে)
২)  ব্রাউজারে ভিন্ন ট্যাব খুলে এই লিংকে যান: http://www.fakemailgenerator.com/ এটি একটা ভুয়া ইমেইল একাউন্ট দিবে 
৩)  দ্বিতীয় ট্যাব এর ইমেল কপি করে পিটিশন/আর্জির জন্য একাউন্ট খুলুন 
৪) ভুয়া একাউন্ট দিয়ে পিটিশন স্বাক্ষর করে ট্যাব বন্ধ করে পুনরায় চালু করুন
৫) এর পরে দ্বিতীয় ট্যাব থেকে ২ নম্বর ধাঁপ থেকে অনুসরণ করে আবার জাল স্বাক্ষর দিন ।

স্ক্রিনশটে দেখবেন ওরা এই সাইট যাতে ফেসবুকে খোলাখুলিভাবে শেয়ার না করা হয় সেই ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছে। আমরা ধারণা করি, বাটপারির এই আওভান পাবলিক করার আগে তাদের ফোরামে-ফোরামে ছড়িয়েছে।

আমরা এখন হোয়াইট হাউজের পিটিশন/আর্জিগুলির যে পাবলিক বা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ডাটা আছে, সেটা বিশ্লেষণ করে দেখি ওদের বাটপারির আরো কিছু প্রমান পাওয়া যায় কিনা। 



এই ছবিতে তারিখ অনুযায়ী পিটিশনে কি পরিমান স্বাক্ষর জমা হচ্ছিল তার একটা গ্রাফ আছে। খেয়াল করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ তারিখ রাতের পর থেকে এই আর্জির পক্ষে স্বাক্ষরের পরিমান বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্লগ পোস্টটি করা হয় বাংলাদেশ সময় মার্চের ছয় তারিখে, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তখনও ৫ তারিখ রাত, মিলে যাচ্ছে। কার্যকারণের একটা ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। এই যে হঠাৎ স্বাক্ষর পরা বেড়ে গেল, সেটি এই বাটপারি পোস্টের পর থেকেই।   




এই ছবিতে আমরা দেখি যারা ভোট দিয়েছে, তাদের নাম কি এবং তারা কোথা থেকে ভোট দিচ্ছে। মার্চের ছয় তারিখ পর্যন্ত ৪২৩২৫ টা ভোট পড়েছিল এবং তার মধ্যে ৮৩৪৪ টির ক্ষেত্রে কোথা থেকে ভোট দেয়া হয়েছে সেই ডাটা পাওয়া যাচ্ছে। ছবিতে খেয়াল করি, এক পোর্ট আর্থার থেকেই "A.A."  আদ্যক্ষরের নামধারী ভোট পড়েছে  ৪৬৭ টা। পোর্ট আর্থার থেকে মোট ভোটের পরিমাণ ৪৭৩।লক্ষ্যনীয় আমেরিকার অঙ্গরাজ্য টেক্সাসের পোর্ট আর্থারে মোট জনসংখ্যা ৫৪০০০ এর মতো(http://bit.ly/13JV1qO) এবং এর মধ্যে প্রায় ১% অর্থাৎ ৪৬৭ জনের নামের সংক্ষিপ্ত প্রকরণ, "A.A." এবং তারা সকলেই বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ও শাহবাগ নিয়ে জানেন!  



তাহলে আমাদের জানতে ইচ্ছে করে, পোর্ট আর্থারের এই "A.A."(আর্থারের আবাল) রা কবে কখন স্বাক্ষর করেছিল। উপরের ছবিতে দেখি ভোট পরেছে ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকেই, তবে ২৬ শে ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চের ৪ তারিখ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন গড়ে স্বাক্ষর পরেছে দৈনিক ৭৫ এরও বেশি। স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে এটি একটি অসঙ্গতি এবং ভুয়া আইডি তৈরী করেই এটি করা হয়েছে। আরো অন্যান্য লোকেশন বা শহরের নাম ও নামের আদ্যক্ষর নিয়েও একই প্রকার বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। একই প্রকার বাটপারির প্রমান বেরিয়ে আসবে নিশ্চিত।

এর পরে আমরা দেখি যে ৮৩৪৪ টি স্বাক্ষরের জন্য স্বাক্ষরকারীর অবস্থান জানা যায় সেগুলির মার্কিন ভূখন্ডে বিস্তার কিরূপ।  সবচেয়ে বেশি ছাগু আছে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি স্বাক্ষর/ভোট পড়েছে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি আর ভার্জিনিয়া থেকে। এর পরেই টেক্সাস আর ক্যালিফোর্নিয়া। একটা সহজ ব্যাখ্যা এই জায়গাগুলিতেই বাংলাদেশী সবচেয়ে বেশি থাকে। এখন এইসব অবস্থান থেকে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে কিনা তার একটা অনুসন্ধান চালানো যেতে পারে।


সারসংক্ষেপ হলো, জামাত-শিবিরের এই বাটপারি ধরা পরে গেছে। যদিও ওরা এখন এই ওয়েব সাইট লুকিয়ে ফেলেছে, কিন্তু পিটিশনের পাবলিক ডাটা এখনো রয়ে গেছে, এবং সাক্ষী দিচ্ছে ওদের জালিয়াতির। 


গবেষক দল: অভি, আসিফ, এনামুল ও কল্লোল 
লিখন: এনামুল(মূল: ইংরেজি) 

No comments: