Monday, December 03, 2012

অন্তর্জলী যাত্রা


[ছবিটা মেরে দেয়া, ফ্লিকার থেকে, কৃতজ্ঞতা:পল্লব শেঠ]


কমলকুমার শুরু হলো। "আলো ক্রমে আসিতেছে" - অন্তর্জলী যাত্রার প্রথম লাইন। ভোর হচ্ছে একটা শ্মশানে। চিতা জ্বলছে। এর মধ্যেই কীর্তনিয়া দল, মৃতদের আত্মীয়স্বজন, কবিরাজ, গণক, গীতাপাঠক, অসুস্থ মুমূর্ষু রোগী সীতারাম, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা লক্ষ্মীনারায়ণ এবং চাঁড়াল বৈজুনাথ। "হরি বোল, বোল হরি"।শ্মশানে কোন উচ্চনিচ ভেদ নাই, জাত অজাত নাই। আসলেই কি? হিন্দু সনাতন সমাজ জ্বলছে। চিতাগুলি জ্বলছে। হঠাৎ হঠাৎ জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে কোন কোন চিতায় দেহগুলি বসে যায়, হাত নাড়ে। মৃতের আত্মীয় স্বজনেরা ভয় পেয়ে যায়; একটা বাচ্চা ছেলে তার বাবার চিতার আগুন দেখে ভয় পেয়ে যায়; সেই সাথে আছে নরবসার এর প্রচন্ড উগ্র এক গন্ধ। চাঁড়াল তো মাতাল; একটা লাঠি দিয়ে লাশ-আগুনের লাকড়ি এগুলি ঠেলা-ঠেলি করে; এই যুগের শ্মশানগুলিতে গেলে দেখা যাবে বেশির ভাগ ইলেকট্রিক চুল্লি হয়ে গেছে অথবা যেগুলিতে কাঠ কয়লার কারবার সেগুলিতে আত্মীয় স্বজন / পাড়ার লোকেরা পোড়ানোতে অংশ নিচ্ছে। সবাই কি চাঁড়াল হয়ে গেল গো? ভারতে কি দশা? হিন্দু সমাজ কি পুড়ে ছাই হয়ে গেল? নয়তো সবাই লাশে হাত দিচ্ছে, আগুনে পোড়াচ্ছে, এ কেমন কথা? ম্লেচ্ছ চুল্লি ই বা কেমন কথা?     

একটা প্রজাপতি উড়ে গিয়ে বসলো মুমূর্ষু বৃদ্ধ সীতারামের বুকে; সেখান থেকে উড়ে গিয়ে সোজা একটা জ্বলন্ত চিতার দিকে।আমি গৌতম ঘোষের আর সীমিত রায় অন্তর এর কাজ দেখতে আগ্রহী। আগ্রহী এই কারণে যে আমার কল্পনায় যে চিত্রপট তার সাথে মিলে কিনা। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা লক্ষ্মীনারায়ণ কন্যা যশোবতীকে মৃত প্রায় সীতারামের সাথে বিয়ে দিয়ে মুক্তি পেতে চান। গণকের হিসাবে সীতারাম একা মরবে না; "দোসর" নিয়ে মরবে। এই দোসর নব পরিণীতা বধু।সহমরণে যেতে প্রস্তুত। প্রজাপতি এই অমোঘ গণনার প্রামানিক। কিন্তু জ্বলন্ত অগ্নিতে পতঙ্গের নির্বাপন কিসের ইঙ্গিত? 

চাঁড়াল বৈযুনাথ মাতাল। কিন্তু গোটা শ্মশানে সে ই একমাত্র যশোবতীকে বাঁচাতে চায়/পারে। কিন্তু সেও অস্পৃশ্য। যশোবতী ? হায় হিন্দু নারী! সীতার দেখানো পথ নয়তো মাদ্রীর দেখানো পথ ছাড়া আর কি আছে? সবাই কি আর কুন্তী-গান্ধারী?                

আবার পড়া যেতে পারে [http://www.mediafire.com/view/?sblro90qrshob0c]।

No comments: