"They say its the last song. They don't know us, you see. Its only the last song if we let it be" - Dancer in the Dark
কোন কিছু খুব ভালো লেগে গেলে আমরা চাই তা হোক অন্তহীন, আর যদি দুঃখের হয়?... ক্লাশ টেন এ পড়ার সময় রাজ্জাকের একটা সিনেমা দেখেছিলাম নরসিংদীর "সুরভি" হলে। শরৎচন্দ্রের কাহিনীর চিত্ররূপ, "বৈকুন্ঠের উইল", ডলি জহুর, বাপ্পারাজ ইত্যাদি। হঠাৎ দেখি পাশে সম্পদ কাঁদে। ওর মা একবার চোখে লংকা বাটা ডলে দিয়েছিল ডাব চুরি করতে গিয়ে পাশের বাড়িতে ধরা খেয়ে নাম ডোবানোর জন্য। তখনও চোখে এত জল দেখিনি। ম্যাটিনি শোতে কান্না লুকানোর কোন উপায় নেই। ছোট পর্দায় অবশ্য ভিন্ন ব্যাপার; জায়গায় জায়গায় থামানো যায়; বিরতিতে কষ্ট বাড়ে। প্রথম পনেরো মিনিটেই টের পেয়েছিলাম এ সিনেমা বড্ড ভোগাবে। শেষটা কেমন? মিলন/বিরহ? অনেকেই দেখেছি ক্লাইমেক্স জানার পর সিনেমা দেখতে পারে না। IMDB তে এই সিনেমাটার একটা রিভিউতে লেখা ছিল, "horryfying", কেন কিভাবে তা পলে পলে টের পাওয়া গেল।
একমাত্র ছোট্ট ছেলেটিকে সাথে নিয়ে চেকোশ্লোভাকিয়া থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমায় সালমা। আজন্ম ব্যাধি ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি। এই অভিশাপ থেকে মুক্ত নয় আদরের সন্তানটিও। আমেরিকায় আসার উদ্দেশ্য? উন্নত জীবন, ছেলের জন্য উন্নত চিকিৎসা। কাজ পায় ক্রোকারিজ ফ্যাক্টরীতে। মেশিন অপারেটর। প্রত্যেকটা পাই জমাতে থাকে। জানে তাকে টাকা জমানো শেষ করতে হবে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাবার আগে। আদরের ছেলে 'জিন' যাতে সুন্দর পৃথিবী দেখতে পারে। আর নিজে? বন্ধু জেফ যখন বলে, তুমি তো দেখতে পাও না, সালমার উত্তর, কী ই বা দেখার আছে? সালমা বুঝে যায় কমিউনিস্ট চেকোশ্লোভাকিয়া এর চেয়ে অনেক ভালো ছিল, এখানে কিছুই ভালো না। ভালো শুধু হলিউড। ব্রডওয়ের মিউজিক্যাল। খুব ভালোবাসে মিউজিক্যাল। এত ভালোবাসে যে ফিনালেটা শেষ হবে তা সহ্যই করতে পারে না, ফাঁকি দেয়, ফাঁকি দিতে চায়, ফাঁকি দিয়ে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে যায় যাতে সিনেমাটা শেষ না হয় আর, ফিনালেটা চলতে থাকুক, সিনেমাটা শেষ না হোক! জীবনকে ফাঁকি দিতে পারে না সালমা। ছেলের জন্য কষ্ট করে জমানো টাকাগুলি চুরি হয়, অন্ধত্বের কারণে চলে যায় একমাত্র চাকরিটাও, আরো দুর্যোগ, আরো বিপত্তি...। ফ্যাক্টরির ম্যাশিনের চলার শব্দের মধ্যে যে মেয়েটা সুর খুঁজে পায়, সে মেয়েটির জীবনের শেষ ক'টি পা চলার জন্যও দরকার হয় সংগীত। রূঢ়-বাস্তবকে আড়াল করে সে সংগীত, মৃত্যুকেও ভুলিয়ে দেয় যে অবাস্তব মোহ, হলিউড, মিউজিক্যাল, আমেরিকা! কিন্তু শেষ রক্ষা হয় কি?
চলচিত্র ইতিহাসের একশ বছর পূর্তিতে দুই দিনেমার পরিচালক ঘোষনা করেছিলেন Dogme95 এর ম্যানিফেস্টো, উচ্চ বাজেট আর কারিগরী চাকচিক্যের শিল্প-বাজারে হাতে ধরা ক্যামেরার ব্যাবহার, কম খরচে দুর্দান্ত সব ছবি তৈরি হয়েছে এর পর। এই ধারার অন্যতম পথিকৃৎ পরিচালক লার্স ফন ট্রায়ারের কথিত ট্রলজির শেষ এই ছবিটা। হাতে ধরা ক্যামেরা বা হ্যান্ড হেল্ড ক্যামেরায় তৈরি আরো কিছু সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা ছিল। বলে রাখা ভালো এই ছবিটাও কিন্তু মিউজিক্যাল, আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে বিয়র্কের অভিনয় দুর্দান্ত! হ্যান্ড হেল্ড ক্যামেরার জন্য যদি কিছু ক্ষতি হয়েও থাকে তা ছাপিয়ে গেছে চৌকস অভিনয় আর পরিচালকের মুন্সিয়ানা।
No comments:
Post a Comment