Monday, August 16, 2010

বিপ্লব স্পন্দিত হৃদয়ে মনে হয় আমিই "কুদ্দুছ"

খবরে প্রকাশ: সংবিধান এ আইন করে "জাতির পিতা" হিসেবে শেখ মুজিবকে স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা চলছে | সুরঞ্জিত বলেছেন এ বিষয়ে "সর্বদলীয় কমিটি" গঠন করা হবে, যা শুনতে ভালই | আরো বলেছেন, "সংবিধান সংশোধন করে ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে লিখবো- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।"



১৯৭৫ এর পরে শেখ মুজিব তার প্রাপ্য সম্মান কোনদিন পান নাই এরকম টা বলা যায়| জীবদ্দশায় সেটির প্রয়োজন ছিল না| দেশটিকে তার নিজের সম্পদ/সম্পত্তি/সন্তান মনে করে নিজের ফরিদপুরী আবেগের সাথে মক্কা-মস্কো থেকে ধার করা নানা আদর্শ এক সাথে মিশিয়ে সোনার বাংলা করতে গিয়ে বড়জোর বাকশাল ঘোষণা দিতে পেরেছিলেন| সংবিধান বা কোন কিছুর প্রতি তার কোন মমত্ববোধ ছিল বলেও মনে হয় না| শোনা যায় কামাল হোসেনের সাথে দেখা হওয়া মাত্রই তিনি বলে উঠেছিলেন, "আগে কও আমারে প্রধানমন্ত্রী বানাইবা কেমনে?" শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতিও ছিলেন| স্বাধীন বাংলাদেশে আসার পর তাজউদ্দিন তার সাথে কথা বলার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলেন | তিনি দেন নি | এটা জাতির জন্য একটা বিরাট আফসোসের কথা | কারণ এর পর থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে তাজউদ্দিন গ্রুপটিকে অবহেলা করতে শুরু করা হয় | শেখ মুজিব কি জন্য এটা করেন নি, তা নিয়ে কালো যাদুকরেরা গবেষণা করুক | তার মনে ধরেছিল মোশতাককে, যে মোশতাক ৭১ এ ইয়াহিয়ার সাথে নিয়মিত ফোনালাপ চালাতেন বলেও জানা যায় | কথিত আছে, মুজিব ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে চিনিয়ে দিয়েছিলেন তার আদরের "মনি"কে | ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীও যে মনির ঔদ্ধত্বে বিস্ময় প্রকাশ করত | মুক্তিবাহিনীর সাথে মনিবাহিনীর ওরফে মুজিববাহিনীর ৭১ এ গোলাগুলি হয় বলেও জানা যায় | জামাল-কামাল এর আম-কাঁঠাল কান্ডকারখানার প্রতি প্রচ্ছন্ন স্নেহসুলভ ছিলেন বলেই বোধ করি | সবাই তো অবুঝ ! বুঝদার ছিলেন এক শেখ মুজিব | স্বাধীনতা বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র, ও আই সির সাথে মিত্র সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন | বাঙালি+বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ক্যাচালটাও তার আমল থেকেই শুরু | মুজিব নিজেও বোধ হয় নিশ্চিত ছিলেন না এ বিষয়ে | ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি নিজের ইচ্ছামাফিক অনেক কিছুই করেছেন | এর পরও হয়ত করে যেতেন | কিন্তু ঘাতকেরা টা হতে দেয়নি | ঐ ঘটনা না ঘটলে কি হতো তা আলোচনায় গিয়ে লাভ নেই | কি হয়েছে তা নিয়ে ২-৪ টা কথা বলা যায়|



তোফায়েল আহমেদ সম্ভবত তাকে একটা খেতাব দিয়েছিলেন | যেটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিয়েছিল | আমি ১৫ আগস্টে একটা গান শুনতাম আগে, "যদি রাত পোহালে শোনা যেত ..."| শিশু মনে অবাক হয়ে ভাবতাম ইস! যদি সত্যি ওরকম হতো! সেটা ছিল আমার শৈশবের শেখ মুজিব | তাকে মনে হত রবার্ট ব্রাউনিং এর কবিতার দেশপ্রেমিকটির মতন | ১৯৯৬ পর্যন্ত শেখ মুজিব তাই ছিলেন আমার কাছে | এর পর আবার হয়ে উঠলেন ছাত্রলীগের, চাটুকারের শেখ মুজিব | পাবলিক টয়লেট বাদে আর প্রায় সব কিছুই তার নামে করা শুরু হলো | তার জন্মদিন/মরণদিনে চাটুকার-এর দল তার এক কুত্সিত স্তব শুরু করলো | এর সাথে তার স্ত্রী-পুত্র-পুত্রবধু-কন্যাদের কাউকে "মাতা"/ কাউকে "ভ্রাতা" ইত্যাদি অর্বাচীন উপাধি দেয়া শুরু হয়ে গেল | মেজর জেনারেল জিয়াকেও অনেকে বিপ্লবী উপাধি দেয় | অনেক টা সেই রকম | অথচ যে উপাধিটা রক্ষা করা দরকার ছিল সঠিকভাবে সেটার প্রতি তিনি জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে তার দল ও অভিন্ন চাটুকারেরা কোনো যত্নই করে নি | ৭৫ এর পরেও জীবিত মুজিব | যেভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে!



মুজিবের খন্ডিত ছবি পাওয়া যায় সবখানে | ৪৩ এর দাঙ্গার সময়কার / ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময়কার অতি উত্সাহী পাঁতি-নেতা মুজিব / বাণিজ্য মন্ত্রী মুজিব / ন্যাপ পেটানো মুজিব / আগরতলার মামলার মুজিব / ৭ ই মার্চের মুজিব / বাকশালী মুজিব | খালেদা জিয়া বলেন "মরহুম শেখ মুজিব", নিজামীও তার নাম নেয়, এমনকি এরশাদ-মইন এরাও | সব ভাবেই মুজিব মুমূর্ষু | মুমূর্ষু মুজিবকে সংবিধানে জাতির পিতা হিসেবে লিখে ফেলুন | তাতে যদি তাকে সুস্থ করে তুলতে পারেন!