ডারউইনের জন্ম দ্বি-শত বার্ষিকী পালন করবে ভ্যাটিকান এবং তাদের মতে আজ আর বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। এমনকি ভিন গ্রহের এলিয়েনদেরকেও তারা আজ নিজের ভাই বলে আগেই স্বীকার করছে তাদের ঈশ্বর সৃষ্ট ধরে নিয়ে। বিজ্ঞানের ভাষা আর ধর্মের ভাষা মূলত আলাদা। আদতে কখনো ধর্মের সাথে বিজ্ঞান তার ভাষা দিয়ে বিরোধে যায়নি। ধর্মই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রতিটি ক্ষেত্রে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ধর্মের সাথে আসলেই যদি বিরোধ থাকে তবে তা দর্শনগুলির।
গত সপ্তাহে আমি মাস্টার্সের ক্লাশ শুরু করেছি। কোর্সের নাম “বায়োইনফরম্যাটিক্স এলগরিদমস”। প্রথম ক্লাসেই আমাদের অধ্যাপক ফাইলোজেনেটিক ট্রি এর উদাহরণ বোঝাতে গিয়ে পড়লেন বিপাকে। ফাইলোজেনেটিক ট্রি হচ্ছে প্রজাতিসমূহের এমন এক হায়ারার্কিক্যাল বিন্যাস; যাতে সময়ের সাথে প্রজাতিসমূহের বিবর্তন ও তাদের কোন সাধারণ পূর্বসুরি নির্দেশ করা হয়। এ বিষয়টি পুরোপুরি না বুঝলে ধরে নিন এটি ডারউইন তত্ত্বের থেকে উদ্ভূত একটি এলগরিদম সংক্রান্ত বিষয়। এখানে দার্শনিক বা নীতিগত একটি বিরোধে জড়িয়ে যেতে পারেন যে কেউ। বিষয়টি হলো ডারউইন তত্ত্ব বিশ্বাস করা আর এটি চর্চার মধ্যে।
আমার মনে আছে তৃতীয় বর্ষে আমাদের যখন “সম্ভাব্যতার সূত্র/মডেল” পড়ানো হয়েছিলো তখনও দ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলেন আমাদের এক শিক্ষক। উনি অবশ্য সদ্য পাশ করা লেকচারার ছিলেন। জুয়াখেলা বা রুল্যেট হুইল থেকে ফ্রান্সে যে সম্ভাব্যতা গণিতের উদ্ভব এবং ইসলামে জুয়াখেলা নিষিদ্ধ, এ দুয়ে মিলে “পড়াব কি পড়াব না”, “চর্চা করব কি করব না” দ্বন্দ্বে পড়ে যান তিনি।
কিন্তু গতদিনের কথা একটু ভিন্ন। আমাদের এই সম্মানিত অধ্যাপক অনেক বেশি ঋদ্ধ ঐ আনকোরা প্রভাষকের তুলনায়। তিনি উত্তর আমেরিকার একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি নিয়ে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। অনেক বেশি দ্বন্দ্ব মোকাবেলা করেই তিনি এটি করতে পেরেছেন। কারণ হিসেবে আমাদের মধ্যে থেকে তার ২-১জন প্রিয় ছাত্রকে তিনি বলেছেন, “পশ্চিমা ভোগবাদ আমার ভালো লাগে নি।” এছাড়া নানা সময়ে তার সান্নিধ্যে এসে আমি ও আমার সহপাঠীরা বিজ্ঞান ও গবেষণার বিষয়ে নানা পথনির্দেশ লাভ করেছি।
যাই হোক ক্লাসে স্যার দেখাচ্ছিলেন একটা ছবি। তাতে মানুষ আর গরিলা এই দুটি প্রজাতি কাছাকাছি এবং তাদের কোন পূর্বপুরুষ থাকতে পারে এরকম একটি সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে। আবার আরও অনেকগুলি প্রজাতির মধ্যেও এরকম কিছু সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। বিষয়টিকে এলগরিদমের ভাষায় ব্যাখ্যা করার পর স্যার বললেন, “এটিকে দার্শনিকভাবে যে কেউ অন্যভাবে নিতে পারে”। স্যার হয়ত নিজেকেই প্রবোধ দিলেন। এক ভাবে দেখলে , “কোন ওষুধ গরিলার উপর ভালো কাজ করলে আর গরুর উপর কাজ না করলে ধরে নেয়া যায় এটি মানুষের উপর ভালো কাজ করতে পারে।” এর পর বললেন, আবার ডারউইনের তত্ত্বের বিশ্বাস করলে, “ধরো দুম করে একটা আওয়াজ হলো আর অমনি একটা বাঘ বিড়ালে পরিণত হয়ে গেলো।” কি অদ্ভূত বিরোধ বিবর্তনবাদের সাথে।
উনি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক। স্যার নিয়মিত নামাজী ও ধর্মাচারী। কিন্তু ভাষিক-যৌক্তিক বিরোধের যে স্বরূপ উন্মোচিত করলেন আমাদের সামনে, তাতে আমরা বেশ মজা পেলাম এবং অনেকেই দেখলাম বিবর্তনবাদের অসারতা এবং ডারউইনের মূর্খতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে গেলো।
মরগ্যান কিংবা তারও পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষদের ২-১ টা জীবাস্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। সেখান থেকে জানা গেছে যে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলির সবগুলি Homo sapiens নয়; Homo erectus বা এ ধরণের আরো প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এমনকি মরগ্যান এবং তার সমসাময়িক নৃবিজ্ঞানীরা যেসব ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন তা পরে প্রমাণিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ফসিল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।
বিবর্তন ঘটতে হাজার-লক্ষ বছর লাগতেই পারে। যেহেতু এটি একটি গুণগত পরিবর্তন তাই এটা ঘটাই স্বাবাবিক। যেটা প্রতিনিয়ত ঘটে তা হলো পরিমাণগত পরিবর্তন। আর উল্লম্ফনের মাধ্যমেই একমাত্র ঘটতে পারে গুনগত পরিবর্তন। তাই দুম শব্দের কারণে হোক আর যে কারণেই হোক, গুণগত পরিবর্তন ঘটতেই পারে, আর তার জন্য প্রয়োজন বাহ্যিক কারণেও সাথে সাথে আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের বিকাশ ও পরিণতি।
এবার শেষ করি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর একটি বক্তব্য দিয়েঃ
“অনেকে আছে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়, ...বলা আছে, পানিতে পড়লে মাছ আর ডাঙায় পড়লে প্রানী, তারা বলে যদি অর্ধেক পানি আর অর্ধেক মাটিতে পড়ে তাইলে কি হবে? বলেন আপনারা এইটা কোন কথা হইল, এই ভাবে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়, বলে এইভাবে চিন্তা করতে...এই ভাবে চিন্তা করলে কি বিশ্বাস থাকবো?...”
(ভাষা কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত)
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে সমালোচনার জন্য হলেও বোঝার চেষ্টা করেছেন। যারা তার বিরোধিতা করেন তারা বোঝার চেষ্টা করলেই হত।
3 comments:
A nice insight in a topic, in fact so nice that I had to read the whole thing.
Hoping to see more similar write-ups in near future.
লেখা ভাল লাগল। আপনি বাংলায় নিয়মিত লিখুন। পড়ে আমরা আনন্দ পাব, কথা দিচ্ছি।
ধন্যবাদ
বাংলা লেখা লিখি আপাতত
এখানে
http://www.somewhereinblog.net/blog/swakkharblog
Post a Comment