Monday, July 25, 2011

আমি তো ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?


উপরের কথাটা বিনয় মজুমদারের। কবি বিনয় মজুমদারের। উদ্ধৃতি প্রয়োগ করে আমার কি লাভ হয়? কবির কথা কি আমার কথা? যদি বলি জগতের সব কথা সব চিন্তা, সব ভাবনা আমার চিন্তা জগতের অন্তর্ভুক্ত তাহলে অত্যুক্তি করা হবে। কবির কথাকে নিজের কথা, কবির প্রকাশকে নিজের প্রকাশ দাবি করার মতন। একটা গন্ডি, একটা অতীত কে মেনে নিয়েই আমি আছি, আমাকে থাকতে হচ্ছে, এর মধ্যেই যত সংজ্ঞা যত স্বাধীনতা, যত তত্ত্ব কথা। তাই “যে কথা কেউ বলে নাই, সে কথা আমিও বলি নাই”- আমাকেও এই সত্য ঘোষণা করতে হয়।

আমার এক বন্ধুর একটা লেখা পড়েছিলাম, তার নাম প্রকাশ করবো না, তবে সে এই লেখাটি পড়বে নিশ্চিত। ব্যক্তিগত কড়চার উপর কিছু বলার চেষ্টা করেছিল তার ঐ লেখাটিতে। এই চিঠিটি লেখার সময় আমার প্রথমেই মনে পড়লো সে কথা। সে প্রসংগটি গুরুত্বপূর্ন আমার কাছে, ঠিক যেভাবে গুরুত্বপূর্ন সেই কথাটি যেখানে আমাকে বলা হয়েছে, “তুমি আশাবাদী”, “তুমি অহংকারী”, “তুমি অস্থির”, “তুমি স্বার্থপর”, “তুমি নির্লোভ নও”, “তুমি লোক দেখানে ওয়ালা”, “তুমি প্রতিভাবান”, “তুমি একটা আহাম্মক”, “তুমি একটা যাচ্ছেতাই”, “তুমি ই পারবে”, “তুমি বদলে যাবে”, তুমি প্রতারক”। কিছু আমি নেবো, কিছু বাদ দেবো। এখানেও সমন্বয়ের(মেলানোর) কাজটা আমাকে সুচারুভাবে করতে পারতে হবে, কারো কথাকে বিশ্বাস করতে হবে, কাউকে অবিশ্বাস করতে হবে, কাউকে অর্ধেক, কাউকে বার আনা, কাউকে পাত্তা দিব, কাউকে দিব না, আমার আয়না, আমি নিজে ঠিক করবো কোথায় কত ডিগ্রি কোন করে কোনটা প্রতিফলিত হবে। এইটাই কাজ। এই খানে একটা সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব। যেটির মোকাবিলা করতেই হচ্ছে। আমি বহুজনে জিজ্ঞেস করেছি, “প্রকাশের কি দায়?”। প্রশ্নটা অনেকেই বুঝে নাই, ঐ আধুলি, সিকির মতন। কিসের প্রকাশ? সবাই কি কবিতা লিখে নাকি? সবাই কি চিত্রকর? আরে ভাই প্রকাশ তো সবখানে! প্রেমিকা বলছেন, “ভালোবাসি”। বন্ধু-ভাই-বোন-মা-বাবা-দেশপ্রেমিক-শিল্পপ্রেমিক, এমনকি মাতালও বলছেন, “মদ ভালোবাসি”। সত্য-মিথ্যা নানান কিছু উপাধি-উপমা-কল্পনা-উদ্ধৃতি-আরোপ-সমর্থন-ক্ষমা-ত্যাগ ইত্যাদি নানা কল্পে শব্দে-ভাষায়-ইঙ্গিতে-ভাবে প্রকাশ হচ্ছে। এর ব্যাতিক্রম নেই। সহজ বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলছি? মৌনতা গ্রহণ করার কথা বলছি? অহংকারকে ত্যাগ করতে বলছি? এমিবার মতন এককোষী হতে বলছি কি? প্রকাশ তো স্বাভাবিক। তবু প্রশ্ন কেন? “দায়”টা কি? ভালোবাসার। রাজনীতির।

উত্তরটা এতদিনে জেনে জেনে যেটা বের হলো, “প্রকাশের দায় রাজনীতি”। আমি ও আমার অপর। এর মধ্যে প্রকাশটা হলো আমার রাজনীতি। ব্যক্তিগত জায়গায় প্রকাশ বলে কিছু নেই। আবার একটু উদ্ধৃতি মারি। রবীন্দ্রনাথের মতেও “নীরব কবি” বলে কেউ নাই। বালসুলভ কোনো কিছুকেও রবিবাবু গ্রাহ্য করতেও নারাজ। ঐ দ্বন্দ্বটি এবং এই প্রকারের যে কোন দ্বন্দ্বে(মামুলি কিংবা ঘটোৎকচ) আটকে হাঁসফাঁস করাকেই আমরা “বালখিল্যতা” উপাধি দিই, আমিও দিই। 
 
দিতে না পারা ও গ্রহণ করতে না পারা, এই দুই জায়গাতে হলো দাতা ও গ্রহীতার বালখিল্যতা। এর মাঝামাঝি অনেক কিছু ঘটে, ঐটা হলো বাস্তবতা। বাস্তবতাকে যে বুঝলো না, সেই তো বালক, সে বেচারা শৈশবেই পড়ে আছে। ইচ্ছে করে পড়ে আছে, অথবা শিখেই নি কোনোদিন। যারা বাস্তবতাকে চিবিয়ে রস-কস নিয়ে গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করছেন, তারা বলবেন, শুধু গুলিয়েই ফেলছো না, যা নয় তার ধাঁধা তৈরী করছো, খেলছো, রহস্য রহস্য খেলা। এখানেই সেই দ্বন্দ্ব, যেহেতু এটি প্রকাশ তাই এই প্রকাশের রাজনীতিতে সফল হতে হবে, শুধু ভালোবাসলেই হবে না। বালকের ভালোবাসা কাজের না। অশিক্ষিত-অপটু-অদক্ষ-অলস কিছু চাই না। 
 
দৈব সত্তায় বিশ্বাস এনে ফেলা যায়। তবে ঈশ্বরের প্রকাশের রাজনীতি একেবারেই দুর্বোধ্য। ঐটা পুরাই রহস্য-রহস্য খেলা, নইলে খেলাই টিকে না, তাই আমি নাস্তিক। তাই আমি গালিগালাজ করি। আমার সমন্বয়হীনতার পিছনেও আমি ঈশ্বরকে পাই, আমার সীমাবদ্ধতা, আমার অচেতন, তাই আমি আস্তিক। লোকে বলবে, এই তোমার দ্বন্দ্বের ফলাফল! পুরাই তো বিভ্রান্তি! আবাল কোথাকার! আমি বলি এটাই আমার প্রকাশ, এর চেয়ে সত্যপ্রকাশ আপাতত আমার আর নেই। 
 
ক্যানভাস বড় করো না, সামলাতে পারবে না, তোমার ফাঁকি ধরা পড়ে যাবে। এটা আমার মনের কথা। আমার প্রকাশের মধ্যে যত হিপোক্রিসি, যত ঐশ্বরিক ইন্দ্রজাল, সব ঐ ফাঁকি। আমার ভালোবাসাও ফাঁকি। অ্যাঁয়!!! প্রথমে তাহলে কি বললে? ভালোবাসাও ফাঁকি? কবি মাত্রেই ভন্ড? প্রেমিক মানেই প্রতারক?

১৮ ই নভেম্বর, ২০১০

No comments: