Wednesday, December 15, 2010

অ্যালান গিন্সবার্গের কবিতা!

ইউটিউবে খুঁজে পেলাম "After Lalon" এর স্বকন্ঠ আবৃত্তিঃ




এবারে একটু লোভই হলো। নিচে তুলে দিলামঃ


ফকির লালন শাহের অনুধ্যান


আমি ধরা পরে গেছি দুনিয়ায়, সতিই তাই! কৈশোরে ব্লেক আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত; এর পরে আরো অনেকেই, বললেনঃ “মৃত্যুর জন্য প্রস্তত হও, জাগতিক ব্যাপারে জড়িয়ে ফেলো না নিজেকে।” তখন আমি ছিলাম যুবক; আর এখন আমি প্রৌঢ়, লক্ষ-নিযুত কিতাব, লক্ষ-নিযুত ভাবনা, লক্ষ-নিযুত টাকা, লক্ষ-নিযুত প্রেম-ভালোবাসায় আটকা, এই দেহ ছেড়ে যাই কী করে? এলান গিন্সবার্গ কয়, সত্যিই কঠিন ঝামেলায় আছি!



এক প্রেমিকের ধারে গেলাম; সে সব বাতলে দিল। যা ফুট! বার ভন্ডা! গোয়া সামলা! ঠ্যাং সামলা! ব্যায়াম কর! ধ্যান কর! মেজাজ সামলা... এখন আমি বৃদ্ধ, আমি হয়ত আর সামনের বিশ বছরও বাঁচব না, বিশ সপ্তাহও বাঁচবো না, হতে পারে এর পরের সেকেন্ডেই আমি মরে গিয়ে কেঁচো হয়ে পুনর্জন্ম নেব। হয়তো এরই মাঝে ঘটে গেছে- আমি জানবো কী করে? এলান গিন্সবার্গে কয়, গোটা সময়টাতে আমি হয়ত স্বপ্নই দেখছিলাম-



রাত দুটো বাজে। ঘুম থেকে উঠতে হবে সকাল সকাল , ট্যাক্সি নিয়ে বিশ মাইল আমার আম্বিশানের পিছে পিছে- এত ফাঁপড় নিয়ে চলি কেমনে? কর্মব্যস্ত জগত! বাজাইরা ধ্যান-ধারণা! যদি কোন আত্মা থেকেও থাকে, তা বেঁচে দিয়েছি সুন্দর সুন্দর কথার কাছে, দেহটাকে বিলিয়ে দিয়েছি এক ফোঁটা নির্যাসের জন্য, মন টা ভরে ফেলছি কামবাসনায়- শ্বাস নেয়ার সময় ভুলে যাই আত্মার কথা, যা কিছু বলেছি সব বড়াই করেই, কোন ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা থাকলে তা গোয়ার ফাঁক দিয়ে বের হয়ে গেছে, আমার যদি সত্যিই কোন এম্বিশান থাকতো তাহলে কেমন করে আমি এই বলিরেখা পড়া মানুষটা হয়ে গেলাম? ভালো ভালো কথা! সকাম প্রেমের সার! দম্ভের অবকাশ! বাড়াবাড়ি পায়ুকাম! প্রমুখ গুনাবলী! এলান গিন্সবার্গ, তালগোল পাকিয়ে ফেলেছো তুমি।



জেগে থাকি আর ভাবি আমার মৃত্যুর কথা—আরো কাছে এসে গেছে, দশ বছর বয়সের আমি, ভাবতাম জগতটা কত বড়-একটু বিশ্রাম না পেলে আরো দ্রুত মৃত্যুর কাছে চলে যাবো, ঘুমিয়ে গেলে হারাবো নির্বানের সুযোগ-রাত্রির মধ্যিখানে বিছানায় পড়ে থাকে এলান গিন্সবার্গ- জাগ্রত অথবা ঘুমন্ত।



ভোর ৪টা। এর পর তারা এলো আমার খোঁজে, আমি কমোডের মধ্যে লুকালাম, টয়লেটের দরজা ভেঙ্গে ফেললো, ওটা গিয়ে পড়লো একটা নিষ্পাপ বালকের উপরে, আহহহহ! কাঠের দরজাটা গিয়ে পড়লো একটা নিষ্পাপ শিশুর উপর! কমোডের উপরে দাঁড়িয়ে শুনতে থাকলাম, আমার ছায়ার পিছে লুকিয়ে গেলাম, তারা ওটাকে শৃঙ্খলিত করলো, আর আমার বদলে ওটাকেই টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল, এরকম করে আর কত বেঁচে যাবো? খুব শীঘ্রই ওরা টের পাবে আমি ওখানে নেই, আবার আসবে আমার জন্য, আমার এ দেহ আমি কোথায় লুকাই? আমি কি সত্যিই আমি নাকি অন্য কেউ অথবা কেউই না? তাহলে এই স্থূল মাংসের দলা, এই দুর্বল হৃৎপিন্ড, আর এই সচ্ছিদ্র বৃক্কনালী? এই পয়ষট্টি বছর ধরে এই লাশটার মধ্যে সময় গুনছে কে? সর্বসাধন সিদ্ধির মোহে ছোটে কে? অচিরেই সব শেষ হবে, কি লাভ হলো? সত্যিই কি তা পাওয়া যাবে? সত্যিই কি তাই হবে?



আমার সুযোগ ছিল, আমি হারিয়েছি, অনেক অনেক বার পেয়েছি, পাত্তা দিই নি। হ্যা, আমি আপনাতে মুগ্ধ হয়েই ছিলাম, ভয়ে প্রায় উন্মাদ হতে গিয়েছিলাম সুযোগ হারিয়ে, হারিয়েই গেলো। এলান গিন্সবার্গ ভনে, হারিয়ে যেও না আমারই ধ্বংসের পথে।


মার্চ ৩১, ১৯৯২




বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালে, অর্থাৎ এটার ৫ বছর পর। যৌবনে তিনি কি কি করেছেন যে শেষ বয়সে তার এই উপলব্ধি! নাকি উপলব্ধি আগেই ছিল?

No comments: