Thursday, April 29, 2010

সকলেই বীর নয়, কেহ কেহ বীর

স্কুলে আমাকে ও আমার সহপাঠীদের একটা শ্লোক শেখানোর চেষ্টা করা হতো, "বীরাভোগ্যাবসুন্ধরা" যার অর্থ "survival of the fittest"। এই স্তোত্রটির বাংলা প্রকরণটি আমার জানা নেই। ইউরোপীয়রা বোধ করি সংস্কৃতটিকেই মেনে চলে। অন্তত fittest বলতে তারা আসলে warrior প্রয়োজনে invader ও বোঝে। আমি নিজে এই "ভারতীয়" শ্লোকটিকে ভয় পাই। আদৌ কি এটা ভারতীয়? ভারত কাদের? তথাকথিত পিঙ্গলকেশী জাতিটির নাকি এখনকার শংকর জাতের(সকলে নয়) অথবা কোল-মুন্ডা-সাঁওতালের। সবার!! তাহলেই সেরেছে! বীরের একার নয় তাহলে? নাকি যারা আছে তারা সকলেই বীর? সকলেই বীর নয়, কেহ কেহ বীর -- জীবনানন্দ বলে যান নি।

বীর/যোদ্ধা বললেই যে যুদ্ধ কল্পনা করা হয় তা কখনো প্রকৃতির সাথে, আবার স্বগোত্রীয় মানবজাতির সাথে। মানবজাতির সকলে এখনও সমগোত্রীয় নয় বলেই কি অপরকে স্বগোত্রীয় ভাবতে পারে না? হতে পারে। ৫০০ বছর আগে পারতো না এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নয়ত আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতন বিশাল দুই মহাদেশে ঈশ্বরের জীব হিসেবে আদিবাসীদেরকে শুধু তাদের নৃতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য টিকিয়ে রাখতো না। এশিয়া-আফ্রিকাতেও তাই দাস বানিয়ে রেখে অথবা এটম বোমা মেরে বীরের কার্য করে যাচ্ছে 'মানুষ'।

ইউ টিউবে নানান ধরণের ভিডিও পাওয়া যায়। তারই একটা আমাকে দেখাচ্ছে জনৈক এডাম(আদি মানব) ডোহি। আমেরিকার 'যুক্তরাষ্ট্র'-'কানাডা' ও ইউরোপে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, আশংকা ও করণীয়। মুয়াম্মার গাদ্দাফি বলছেন, "আমরা অস্ত্র/সন্ত্রাস ছাড়াই মুসলিম ইউরোপ তৈরি করে ফেলব।" চিন্তার বিষয়, কেননা ধর্মীয় রাষ্ট্র মানেই Suppression. তাহলে উল্টা পিঠে কি আছে? বেলজিয়াম-ফ্রান্স তার দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করছে, সুইসরা মসজিদের মিনার নির্মান নিষিদ্ধ করছে, বড় শহরগুলিতে আযানের ভলিউমেও নিষেধাজ্ঞা।

আদি মানবের যুক্তি হলো, উদার মনের ইউরোপীয়রা যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফ্রিকা-আরব থেকে মুসলমান উদ্বাস্তুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনে, তার এই প্রতিদান? অনামন্ত্রিত সাদা চামড়া কম্বলের ভিতরে বসন্ত উপহার দিয়া আমেরিকা উজাড়ের তাহলে প্রতিদান কি হতে পারে? সার্বিয়া-বুলগেরিয়াতে বা তুরস্কে মুসলমান যে জুজু তৈরি করেছে তার জন্য কি প্রতিশোধ হতে পারে? ৯-১১? সে তো বিভ্রান্তি! ইহুদী? যে জাতির ৬০ লক্ষ গ্যাস শুঁকে মরে গেল, তারা কি প্রতিশোধ নিচ্ছে? আদি মানব অবশ্য ইহুদীদেরকে সব কিছুর গোঁড়ায় পায়। কম্যুনিজম-টেররিজম ইত্যাদি। একবার ভুলে(??) বলে ফেলল চায়নার উত্থানের জন্যও দায়ী ইহুদী। পরে বুঝলাম ভুলে বলে নাই।

সে যে জটিল ব্যাখ্যাটি দাড় করালো সেটার অল্পই তার মতন লোকের পক্ষে সম্ভব। ব্যাখ্যাটি সে ধার করেছে টিভি-ইন্টারনেট-পত্রিকা থেকে। সাঈদ(Edward Said) সাহেবের উপর আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। সর্বশেষে এডাম যা বলে তাতে আমার সিগারেট খেতে ইচ্ছে করে। বাইরে যাই। সে বলে, "তুমি আমাকে এগুলা বলছ কেন? আমরা হাঙ্গেরি-রুমানিয়ার লোকেরা দায়ী না, দায়ী সমুদ্রের পাড়ের এংলো-ফরাসি-ওলন্দাজ-দিনেমার-পর্তুগিজ-ডয়েশ-বেলিজেরা।" তোমার ইউরোপীয় শৌর্য-বীর্য তাহলে কোথা থেকে আসে, হে আদি মানব? থুককু, এটা আমি আবার কি ভেবে বসলাম, ভাগ্যিস বলি নাই।

এই জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদ নিয়ে আসে শেষমেশ যুদ্ধ-প্রতিশোধ ইত্যাদি। সেখানে যে জিতে যায় সেই বীর, সেই পায় বসুন্ধরা। তাইলে উপায়? উপায় আছে। আদি মানবের মতে, আমার বই লেখা উচিত। সেই বই পড়ে লোকেরা আমাকে মারতে আসবে। তার মতে, সে জ্ঞানী ব্যাক্তি, কারণ সে সমাজতান্ত্রিক-পুঁজিতান্ত্রিক-ইহুদী-খ্রিস্টান-সেকুলার-ক্যাথলিক-প্রোটেস্টান-ইউটোপীয়ান সব সমাজে বাস করেছে অথবা জানে। অনেক মানুষ চেনে। আমার উচিত সমাজবিজ্ঞান-ইতিহাস-দর্শন ইত্যাদি, না পারলে অন্তত সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ালেখা করা। আমি তারে বললাম, "ট্যাকা কে দিব?" মনে পড়ল, ওদের টাকায় আছি, বেশি ঝামেলা করা ঠিক না। আর তর্কবীর হয়ে কাজ নাই। শুভরাত্রি।

উল্লেখ্য, আদি মানব আমার বাড়িঅলা।