Sunday, February 28, 2016

দ্যা গুড অার্থ

"চীনের কথাই ধর না কেন। বন্যা এসেছে. হু হু করে জল বাড়ছে। মানুষগুলি সন্ত্রস্ত। তাদের সব সম্বল ভাসিয়ে নিয়ে য়াচ্ছে। শীতে তারা কাঁপছে। অারো বেশি করে কাঁপছে অত্যাসন্ন মৃত্যুর ভয়ে। এখনি এই মুহুর্তে অার একটা কল্লোলধারা এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে্ উপায় নেই। তারা অাকাশের দিকে চাইছে-এখনি শেষ মরণ-চীৎকার দিয়ে তলিয়ে যাবে। অার একটু-অার একটু-অার একটু-ব্যাস্; অার একটু হলেই সব শেষ হয়ে যাবে।
এমন সময় দেবতার অাশীর্বাদের মতন এলো নৌকো। তারা মার্কিন। তাতে অাছে এক পাদ্রী। তারা তুলে নিয়ে গেল মরণযাত্রীদেরকে মরণের মুখ থেকে তাদের নৌকোয়। - এমন ধরণের একটা গল্প কি তুমি লেখ নি? কেন তাদের মরে যেতে দিলে না? তাদের মরে যেতে ক্ষতি কি, যদি নিজের চেষ্টায় বাঁচতে না পারলো? বিদেশী মিশনারীর হাতে অাত্মিক মৃত্যুলাভ অপেক্ষা সলিলাবর্তে তলিয়ে মৃত্যু অন্তত গৌরবের দিক দিয়ে কম কিসে?" - [ভারতের চিঠি- পার্ল বাক কে, অদ্বৈত মল্লবর্মণ]

দ্যা গুড অার্থ যখন লেখা হচ্ছে সুপ্রাচীন ও সুবৃহৎ দুটি জনগোষ্ঠী তখনও পরাধীনতায় শৃঙ্খলাবদ্ধ। "প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপ" এর চাপে দুর্গতি-অবসানের দু:সাহস হারিয়ে ফেলেছে। বাকের ফিউডাল চীনে খামখেয়ালি প্রকৃতি অাছে, 'প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপ' সেখানে দুই হাতে গ্রাস করছে দুর্গতকে। ১৫ বছর অাগে পুরোনো বইয়ের স্তুপের মধ্যে থেকে  বাকের "Tell the People: Talks with James Yen About the Mass Education Movement" পড়েছিলাম, বন্ধুদের পড়ার অাড্ডায় সে নিয়ে কথাও হয়েছিল। বইটাও খুঁজে পাওয়া যাবে হয়ত অালমারিতে। সেদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম, চৈনিক জাতির প্রতি শ্বেতাঙ্গিনী বাকের ভালোবাসায়। চীনা বিপ্লবকে তখন গাঁদা ফুলের মালা পড়াচ্ছি, কুঞ্জবিহারীর গলায় রাঁধা। ভিতরকার পাঠক স্বরূপের খুব পরিবর্তন হয়নি। রাঁধা জীবিত অাছেন, অায়ান ঘোষের সংসারও করছেন, বাঁশরিতেও মজে অাছেন। এবার তাকে পেলাম অদ্বৈত মল্লবর্মন ঘুরে।  এর পরের দু'খন্ড পড়ার ইচ্ছেটা এখনই হচ্ছে না। তবে দ্বিতীয় উপন্যাসে দ্যা গুড অার্থ এর প্রোটাগোনিস্ট চৈনিক কৃষকের কনিষ্ঠ সন্তানটি বিপ্লব সেরে / যুদ্ধ থেকে ফিরবে এবং সংসার যাপন করতে ধরবে, এমন একটা অাশ্বাস অাছে। এর পরের সময়টা কুমিংটাং এর ভাঙ্গনের। তৃতীয় পুস্তকের শিরেনাম "এ হাউজ ডিভাইডেড(১৯৩৫)"! তবে এর মধ্যে বাকের অন্য দুই মহান কর্মের ("দ্য এক্সাইল" অার "ফাইটিং এঞ্জেল") প্রথমটি পড়ার লোভ অাছে।  

উপন্যাসের বর্ণনাশৈলী অনন্য, ইংরেজীতে পড়াই শ্রেয়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের করা অনুবাদ নাড়াচাড়া করে দেখেছি মূল পড়ার সময়কালেই, রস নাই। কমুনিস্ট চীনে "নিষিদ্ধ" বাক জীবনের শেষ ভাগে খুব করে একবারের জন্য হলেও ফিরতে চেয়েছিলেন চীনভূমে। পারেন নি। ১৯৩৫ এ ফিরে গিয়েছিলেন অামেরিকায়, তার নিজের সন্তান মানসিক ভাবে বিকলাঙ্গ বা অসুস্থ, দ্যা গুড অার্থের কৃষকের জ্যেষ্ঠাটিও তাই। অদ্বৈত মল্লবর্মন এর প্রসঙ্গে ফেরা যাক।

দুর্ভিক্ষের সময় দক্ষিণের শহরে অাশ্রয়প্রার্থী কৃষকটি যেন, "as alien as a rat in a rich man’s house that is fed on scraps thrown away, and hides here and there and is never a part of the real life of the house." মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্প, "ছিনিয়ে খায় নি কেন"র ৪৩ এর মন্বন্তর পীড়িত মানুষ গুলির মতন; ভদ্রলোকের ছুড়ে দেয়া অামের অাটি কাড়াকাড়ি করে খাচ্ছে পথের কুকুর অার কাকের সাথে লড়াই করে। সে মানুষ বিপ্লবের বা লড়াই এর ধার ধারে না।
"And when on another day he heard a young man speaking — for this city was full of young men speaking — and he said at his street corner that the people of China must unite and must educate themselves in these times, it did not occur to Wang Lung that anyone was speaking to him."
 অাফিম অাক্রান্ত জাতি কি জেগে উঠবে? সামন্ত রক্তবীজ দানবশিশু যা ভারত অার চীন কে বিপর্যস্ত করে রেখেছে দীর্ঘকাল, তার শুশ্রুষা কি জাতীয়তাবাদী বিপ্লবে নাকি মার্কিন মিশনারী নৌকায়? বাক ছিলেন মার্কিন মিশনারী পিতামাতার সন্তান, তার প্রথম স্বামীও ছিলেন একজন মিশনারী। উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট "নৈসর্গিক উপপ্লব-অজন্মা-প্লাবন-অনাহারে" যেমন নষ্ট হয় না, বিপ্লব বা অাফিমেও (মিশনারির কিংবা পপির) তেমনি রক্ষা পায় না, রক্ষা পায় হঠাৎ সুপ্রসন্ন ভাগ্যগুণে।