Sunday, July 27, 2008

Waiting - Osamu Dazai

প্রতিদিনই কারো সাথে দেখা করার জন্যে আমি ঐ ছোট্ট স্টেশনটাতে যাই। কিন্তু কার সাথে, তা আমি জানি না।

বাজার থেকে আমার ঘরে ফেরার পথেই ওখানে যাই। একটা বেঞ্চির ঠান্ডার উপর বসি, কোলের উপর ঝুড়িটাকে রেখে, এর পর টিকেট গেটের উপর স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। প্রত্যেকবার একটা করে ট্রেন আসে-একটা আপমেইল-একটা ডাউন মেইল-যাত্রীরা সব বগিগুলি থেকে হড়হড়িয়ে বের হয়ে আসে আর গেটটার দিকে এসে চাপাচাপি করে জড়ো হয়। পাশগুলি দেখানোর সময়, টিকেট দেবার সময় তাদের রাগী চেহারাগুলি দেখি। এরপর সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে এরা হনহনিয়ে চলে যায়। তারা আমার বেঞ্চটার কাছে আসে, এর পর স্টেশনের সামনের ফাঁকা জায়গাটার কাছে চলে যায়, শেষমেশ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আমি ওখানেই বসে থাকি। কেউ যদি আমায় দেখে একটু হাসে বা খানিকটা কথা বলে? না! না! দয়া করে না! এতে আমি প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়ি। এটা ভাবলেই আমি কেঁপে উঠি, যেন কেউ আমার পিঠে অনেক ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিয়েছে, আর আমি যেন শ্বাস নিতে পারছি না। কিন্তু তার পরেও আমি কারো জন্য অপেক্ষা করি, প্রতিদিন। আমি আসলে কার জন্য অপেক্ষা করি? কোন ধরনের মানুষের জন্য? সে তো কোনো মানুষ নাও হতে পারে। আমি মানুষ পছন্দ করি না, অথবা তাদের ভয় পাই। কারো সামনাসামনি দাঁড়িয়ে, এরকম কোন কথা বলতে, আপনি কেমন আছেন? যেগুলি আমি বলতে চাই না, অথবা অনেক শীত পড়েছে এই সব বলার জন্য বলার ব্যাপারগুলি। আমি এটা ঘৃণা করি। আমার কাছে মনে হয়, আমি মিথ্যা বলছি, যেন এর চেয়ে বড় মিথ্যাও আর পৃথিবীতে নেই। আমার মনে হয়, আমি মরে যাই। আর যে লোকের সাথে আমি কথাগুলি বলি, সে আমার সম্বন্ধে মোটেই নিশ্চিত না, কিছু অস্পষ্ট প্রশসা করে যায়, এমন সব ধারণা ব্যক্ত করে যেগুলি আসলে তার না। আমি এদের কথাগুলি শুনি আর মন খারাপ করতে থাকি, দুঃখ পাই তাদের নিম্ন মানের সতর্কতা দেখে। সাথে সাথে পৃথিবীটাকে আরো বেশি করে ঘৃণা করতে থাকি- আর পেরে উঠি না। মানুষ কি সব সময়ই এরকম- সারাজীবন ধরে পরস্পরের সাথে এই রকম নিষ্প্রাণ সম্ভাষণের বিনিময় করে যায়? আমি মানুষের সাথে থাকতে পছন্দ করি না। এ জন্যে খুব কদাচিৎ, আমি বন্ধুদের সাথে দেখা করার মত কাজ করেছি। আমি সবসময় বাড়িতে থাকতেই ভালোবাসতাম, আমার মায়ের সাথে বসে চুপচাপ সেলাই করতে, শুধু আমাদের দুই জন। কিন্তু যখন যুদ্ধ আরম্ভ হলো তখন ব্যাপারগুলি নিয়ে এত ভয় শুরু হলো যে আমি বুঝলাম, আমি শুধু একা প্রতিদিন ঘরে বসে থাকি না। আমার অস্বস্তি শুরু হলো, এবং কোনোভাবেই নিস্তার পেলাম না। আমার মনে হলো আমি আমার যথাসাধ্য দিয়ে এমন কোনো একটা কঠিন কাজ করি, যাতে আমি সরাসরি সাহায্য করতে পারি। যে উপায়ে আমি চলছিলাম তাতে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলেছিলাম।

আমি চুপচাপ বাড়ির ভিতর বসে থাকতে পারলাম না। কিন্তু বাইরে যে যাবো, যাবো টা কোথায়? তাই আমি বাজার করি, আর ফেরার পথে স্টেশনটাতে যাই আর বেঞ্চির ঠান্ডার মধ্যে গিয়ে বসি। আমি চাই সেই কেউ একজন আসুকঃ ইস! এগুলি যদি সত্যিই ঘটে? কেউ যদি আসে? আমি কি করবো? সাথে সাথেই বের করলাম, ঠিক করে ফেললাম, যদি তারা আসেই, তবে আমি আমার সমগ্র জীবন তাদের জন্য দিয়ে দেবো, সেই মুহুর্তে আমার নিয়তি ঠিক হয়ে যাবে। এই অনুভূতিগুলি পরস্পরের সাথে অদ্ভুতভাবে প্যাঁচ খেয়ে আছে, এই ভাবনাগুলি, এই দুর্বল কল্পনাগুলি। আমার বুকের মধ্যে ব্যথা উঠে, এটা তীব্রতর হয়, যন্ত্রণাদায়ক হয়। জগতটা নিষ্পন্দ মনে হয়, স্টেশনে আসা-যাওয়া করা লোকগুলিকে দূরের আর ক্ষুদ্র মনে হতে থাকে, মনে হয় যেন দুরবীণের উল্টা দিক থেকে দেখছি। সব মনে হয় অবাস্তব, যেন একটা দিবাস্বপ্ন, যেন আমি জীবিত না মৃত তাই টের পাচ্ছি না। আহা! আমি ঠিক কিসের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পারি? হতে পারে আমি একটা নোংরা বেশ্যা। এই যে যুদ্ধ আর সে জন্যে আমার খারাপ লাগা, আর কঠিন কোনো কিছু জন্য যথাসাধ্য করার ইচ্ছা- হতে পারে এই সবই মিথ্যা। হতে পারে আমি একটা অজুহাত বের করার চেষ্টা করছি, আমার খামখেয়ালী কল্পনাগুলিকে সত্যি বানানোর একটা সুযোগ খুঁজছি। এই শুণ্য মুখ নিয়ে আমি এখানটায় বসে থাকি, আর ভিতরে ভিতরে মনে হতে থাকে যেন একটা মৃদু আলো, এক দুর্দমনীয় অভিসন্ধিজাত স্ফুলিঙ্গ।

কে সে? যার জন্য আমি অপেক্ষা করে আছি। শুধু এইটুকু। আমার কোনো ধারণাই নেই এই ব্যাপারে- শুধু একটা অস্পষ্ট ছায়া, মনের ক্ষীণ কুয়াশার মধ্যে। তারপরও আমি অপেক্ষা করি। যেদিন থেকে যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছে ঠিক সেদিন থেকে প্রতিদিন আমি বাজার থেকে ফেরার পথে স্টেশনটাতে আসি, ঠান্ডা বেঞ্চিটাতে বসি, আর অপেক্ষা করি। যদি কেউ আমায় দেখে একটু হাসে বা খানিকটা কথা বলে? না! না! দয়া করে না! আপনি সে নন যার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। তাহলে সেটা কে? আমি কার জন্য অপেক্ষা করছি? একজন স্বামী? না। একজন প্রেমিক? নিশ্চিতভাবেই নয়। একজন বন্ধু? আহ তা নয়। টাকা? অসম্ভব। তবে ভুত? না! না! না!

কিছু একটা আরো বেশি প্রশান্তির, আরো উজ্জ্বল আরো আশ্চর্যময়। আমি জানি না কি। বসন্তের মতো কিছু একটা। না, সেটা না। সবুজ পাতার মতো। হতে পারে। গমক্ষেতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শীতল স্বচ্ছ জলের ধারার মতো। নাহ, এটা একেবারেই না। তবে, তার পরেও আমি অপেক্ষা করি, আমার হৃৎকম্পিত হয়। মানুষ আমার চোখের পাশ দিয়ে ছুটে যায়। এটা না, ওটাও না। আমার বাজারের ঝুড়িটা হাতে নিয়ে আমি কাঁপতে থাকি। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। আমার সমস্ত মন নিয়ে আমি অপেক্ষা করতে থাকি। আমি আপনাকে বলছি, দয়া করে আমাকে ভুলে যাবেন না, আমি সেই মেয়েটা যে প্রতিদিন স্টেশনে আসে আপনার সাথে দেখা করতে, আর প্রতিদিন মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যায়। দয়া করে, দয়া করে আমাকে মনে রাখবেন আর আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। আমি ঐ ছোট্ট স্টেশনটার নাম বলবো না। বলার দরকার নেই, আপনি আমাকে দেখতে পাবেন কোন কোন সময়, আমি দেখতে না পেলেও।


3 comments:

SMS said...

Kee jani kisher o lagi pran kore hai hai...

Swakkhar Shatabda said...

exactly!! tobe onuvober parthokyer ekta jaiga ase, ejonno ami robindranathoke voy pai....se beta eto sob bujhe ki vabe? materialistic way te bujhe nai asole, romantic/ideologist. jai hok. parle ei Osamu Dazai er bio ta pore dekho

AMIT said...

porte valo legeche but kichui bujhi nai....
mathar upor diye geche....
probably i am not eligible to read the topic