Sunday, April 07, 2024

পশ্চিমের ''ফার্স্ট কাউ"

 ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১ 





কলম্বিয়া নদীতে একটা জাহাজ চলছে, সেই দৃশ্য দিয়ে সিনেমার শুরু। পর্দার বাম থেকে জাহজটা তার স্বাভাবিক গতি নিয়ে পর্দার ডান পর্যন্ত যায়। জাহাজের ইঞ্জিন অতি আধুনিক, আকার প্রকান্ড। একই নদী আমরা যদি দুশ বা আড়াইশ বছর পেছনে গিয়ে দেখি, দেখবো আরেকটা জাহাজ। এটিও বাম থেকে ডানে ধীর গতিতে পার করবে, এই ইঞ্জিন আরেকটু ধীর হতে পারে। জীবনের অতি স্বাভাবিক গতিকে অতিক্রম করার উপায় নেই। ফিকশন, সিনেমায়, গল্পে, উপন্যাসে এমনকি বাস্তবে, কোন ইঞ্জিনই জীবনকে দ্রুতগামী করতে পারে না। ফার্স্ট কাউ সিনেমার প্রথম কয়েকটি দৃশ্য।




আমেরিকার উত্তরের ওরেগনের একটি ট্রেডিং পোস্ট এই সিনেমার গল্পের কেন্দ্রে। ট্রেডিং পোস্ট মানে সেই পুরানো দিনে, আমেরিকার পশ্চিম তখনো ইউরোপীয় সেটেলাররা পুরোপুরি দখলে আনতে পারে নি । যখন জীবন ধীর ছিল বললে আমরা আর আপত্তি করি না। ইউরোপে তখন পুঁজির ঢেউ লেগেছে, নতুন পৃথিবীর পশ্চিম বাকী পৃথিবীর মানুষেরা জয় করতে এসেছে। কোষে কোষে এখনো প্রাক-কৃষি যুগের ডিএনএ। সিনেমার মূল চরিত্র ফিগোউইতজ ওরফে কুকি প্রাক-কৃষি যুগের সংগ্রাহক গোছের, এই নতুন দুনিয়াতে রান্না ও রুটি ইত্যাদি বেকারী সামগ্রীর তৈয়ারে পারঙ্গম। বীভার শিকারী একটা দলের খোরাক যোগানোর কাজে নিযুক্ত হয়ে সেই দলের সাথে আমেরিকার পশ্চিম তীরের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্যারিসে তখন বীভারের চামড়ার হ্যাটের ফ্যাশন পড়ন্ত। নতুন ফ্যাশন কী হবে সেই দুর্ভাবনা করতে দেখি হাজার মাইল দূরের নেটিভ আমেরিকার সর্দারকে। কে বলে জীবন ধীরগতির!





জঙ্গলে মাশরুম খুঁজতে গিয়ে কুকি ফিগোউইতজ এর সাথে দেখা হয় চৈনিক কিং লুর। কিংলু ডায়াস্পোরা, ম্যারিল্যান্ডের কুকিও এক অর্থে ডায়াস্পোরা। ইউরোপীয়, চৈনিক, নিগ্রো, নেটিভ, ইহুদী, মুসলমান, ইন্ডিয়ান, আরব, গরীব, দুঃখী, ডায়াস্পোরা ইত্যাদি। কিংলু কুকির চেয়েও ভালো ইংরেজি বলে, অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান ও কুশলী, ক্যাপিটালিজম এর স্বপ্ন তার দুইচোখে, সান ফ্রান্সিসকোতে গিয়ে নতুন হোটেল খুলতে চায়। ক্যান্টন থেকে জাহাজে চড়ে লন্ডন ঘুরে ওরেগন পৌছেছে এই ডায়াস্পোরা। রাশিয়ান রা তার পিছু নিয়েছিলো। কুকি তার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। ফার্স্ট কাউ বন্ধুত্বের গল্প।





এই বাণিজ্য কেন্দ্রটিতে আমরা অনেক জাতের মানুষকে দেখতে পাই যারা সংগ্রামে লিপ্ত, জীবনের প্রত্যেকটি দিন ধীর গতিতে আগাচ্ছে, একটা দিনের পরে আরেক দিন টিকে থাকাই জটিল ও কঠিন। ডিরেক্টর চিত্রনাট্যের শৈল্পিক ধীরতায় পটভূমির মধ্যে নিয়ে আসেন কলম্বিয়া নদীর ধার, অরণ্য, কুটির, বাজার, বাজারের প্রাঙ্গনের কাঁদা, মানুষের অনিশ্চিত সংগ্রাম, তার মধ্যে ক্ষমতা ও সভ্যতার দ্বন্দ্ব। ঔপনিবেশিক চিফ এই ক্ষমতার পিরামিডের উপরে বসে আছেন, বাকীরা প্রায় নাই বললেই হয়। ওরেগনের এই আদিম কাঁদার পৃথিবীতে তার ক্ষমতা তাকেই শুধু লন্ডন (যা কিনা ততকালীন বিশ্বের তথাকথিত সভ্যতার উৎকর্ষের কেন্দ্র) এর আরাম আয়েশের কথা ভাবার সুযোগ দেয়। তার ইচ্ছে হয়, ইংলিশ চা পানের, লিকারের সাথে কিঞ্চিৎ গোদুগ্ধ। এর ফলেই সিনেমার হাজির হয় কেন্দ্রীয় আরেক প্রধান চরিত্র, গরু! প্রথম গরু, ফার্স্ট কাউ।




কলম্বিয়া নদী ধরে একটা ভেলা বা ফেরীতে করে এক দিন হাজির হয় গরুটা। পথে তার স্বামী ও সন্তানের মৃত্যু ঘটেছে। এই দুগ্ধবতীকে কেন্দ্র করেই এর পর আগাতে থাকে মানুষের আগ্রহ, সিনেমার গল্প।




ছোট বাণিজ্য কেন্দ্রটিতে পরিবর্তন আসছে। গরু চলে আসা একটা লক্ষণ। সেই গরু ঘাসের গালিচায় বাধা থাকে। তাকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত হয় শ্রমিক। কুকি রান্নায় পারদর্শী। একদিন কিংলুর মাথায় বুদ্ধি আসে, গরুর দুধ চুরি করার। চুরি করা অল্প দুধে কুকি বানায় বিস্কুট। সেই সুস্বাদু বিস্কুট খেয়ে কিংলু ব্যাবসার বুদ্ধি আটে।




এখানে এক পেগ হুইস্কির দাম দুই সিলভার। অত্র এলাকার মানুষ বহু বহু দিনের গরুর দুধের স্বাদ কী জানে না। কিছু মধু, দারুচিনি, ইত্যাদি সংগ্রহ করে কুকি আর কিংলু প্রথম দিন তৈরি করে ছয়টা তেলের পিঠা। বাজারে গিয়ে বসে যায় সেই ছয়টা পিঠা নিয়ে। বুদ্ধিমান কিংলুর কারণে বেশ ভালো দাম পায় সবকিছুর। উৎসাহিত হয়ে তাদের দুধ চুরি এবং তেলের পিঠা কার্যক্রম চলতে থাকে। কিংলু খুব বুদ্ধি করে যোগান সীমাবদ্ধ রেখে তেলের পিঠার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক লাভ হয়ে যায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই। ক্যালিফোর্নিয়াতে তখন অঢেল সুযোগ। অল্প টাকায় জমি পাওয়া যায়। দুই বন্ধু স্বপ্ন দেখতে শুরু করে কৃষি খামারের। প্রাক-কৃষি মানবের ধমনীতে পুঁজির আনন্দ।




রাতের বেলা কুকি প্রতিদিন যায় দুধ চুরি করতে। গাছে উঠে কিংলু পাহারা দেয়। আমাদের প্রাক-কৃষি মানব কুকি, প্রতিদিন গরুর কাছ থেকে অনুমতি নেয়, তার স্বামী ও সন্তানের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। গরু সম্ভবত সেই প্রথম দিকের প্রাণীগুলির একটা যারা মানুষের সাথে কৃষি যুগে প্রবেশ করেছিল। কুকির কথা যেন বুঝতে পারে গরুটা। লেজ নাড়ায়, মাথা নেড়ে সায় দেয়। এক সাথে পুঁজিবাদের সংগ্রামে সাথী হয়।




সুস্বাদু তেলের পিঠা খুব দ্রুতই মনোযোগ কাড়ে চিফের। চিফ কুকিকে ব্যাক্তিগত কাজে লাগায়। তার এক অতিথির জন্য ব্লুবেরি ক্ল্যাফোটিস বানানোর কাজ দেয়। কুকির রান্নায় খুব খুশি হয়ে চিফ তাকে গরু দেখাতে নিয়ে যায়। কুকিকে দেখে গরুটা স্বাভাবিকভাবেই লেজ নাড়ায়, মাথা এগিয়ে দেয় আদরের সাথে। চীফ ও অন্যান্যরা সন্দেহের চোখে দেখে, কিংলু ও কুকি প্রমাদ গোনে। এ যাত্রা বেঁচে যায় দুইজনেই। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে তো!




গল্পের এই জায়গা থেকে আমরা কোন পরিণতির দিকে যেতে চাই ঠিক করে নিতে পারি, বা চাইলে সিনেমাটাও দেখা যেতে পারে গল্পের খাতিরে। পাশেই কলম্বিয়া নদী, কুকি আর কিংলু চাইলে নদীর ভাটিতে পালাতে পারে, অন্যদিকে চিফের আছে বন্দুকবাজ বাহিনী। এই ঔপনিবেশিক ও পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার ন্যায়-অন্যায় সব চীফের পক্ষে। চৈনিক কিংলুর এর মতন এলিয়েন (জেনোফোবিক আমেরিকায়/পৃথিবীতে) আর কুকির মতন দুর্বল-পুঁজিহীন-অর্বাচিন যে অন্যায় করেছে দুধ সংগ্রহ করে তার কী শাস্তি বিধান করা যায়? দুইশ বছর পরের এই পৃথিবীতে কি গল্পটা ভিন্ন হবে? বা আজ থেকে দুইশ বছর পরে আমাদের কবর খুড়ে যারা আমাদের অস্থি-কঙ্কাল আবিষ্কার করবে তারা আমাদের ন্যায়-অন্যায়ের জন্য কি শাস্তি বিধান করবে? সেই নতুন পৃথিবীতে প্রাক-কৃষি মানব, গুহামানবের অধিকার থাকবে তো?




জোনাথন রেমন্ডের গল্পে পরিচালক কেলী রাইকার্ডের সিনেমা ফার্স্ট কাউ। সিনেমাটির শৈল্পিক ধীরগতির কথা বলেছি, কিন্তু এই ধীরগতি নিয়েই ক্লাইম্যাক্স এর দিকে নিয়ে যায় চিত্রনাট্য, থ্রিলার বলা যায় প্রায়। সেই ঊনবিংশ শতকের শুরুর আমেরিকার ওয়েস্ট তার জীবন ও মানুষ, তার দৈনন্দিন ভাবনা, বেঁচে থাকা, বন্ধুত্ব, ইত্যাদি নিয়ে এই ছবি। পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিবে। কত পুরানো? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য বর্তমানের উত্তর-ঔপনিবেশিক / নিও লিবারেল মানুষের অবসর প্রয়োজন।

Wednesday, September 28, 2022

পাখিসব করে রব

 


কোথায় ছড়াচ্ছে ধান উঠোনে কাকের সাথে

বুলবুলি, শালিক, ফিঙে এই সব পাখি
দুর্বাসার পেট চিরে ফরফর পাখা নেড়ে
উলু আর ঘুণেদের বাস্তবতা ও গণতন্ত্রে
পরিযায়ী সেই সব পাখি ছড়াচ্ছে
সংবেদ, নক্ষত্রের এক অলীক বাগানে
জেগে থেকে অমৃত সঙ্গমের আকাঙ্ক্ষায়।

Saturday, May 15, 2021

ইজরায়েল

 "...মুখটার দিকে তাকিয়ে দেখো

একটু সচেতন হলেই দেখতে পেতে
গ্যাস চ্যাম্বারে তোমার মায়ের মুখ
রাইফেলের প্রয়োজন ফুরোতো
তুমিও বলতে পারতে-
এভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না কারো পরিচয়..."

(একজন খুনীর প্রতি) / অবরোধকাল - মাহমুদ দারবিশ (রামাল্লা, জানুয়ারি ২০০২)

জেরুজালেম ভ্রমণ নিয়ে একটা পুরনো বই পড়েছিলাম কিছুদিন আগে, ভারতে কর্মরত এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার। কোলকাতা থেকে অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত সেই আমলে। গ্যালিলির সমুদ্র, বেথলেহেম, নাজারেথ, এই সব গ্রাম, ভূমধ্যসাগর হতে দেখা ও পরে কাছ থেকে দেখা জুডিয়ার গ্রাম-পাহাড়গুলির রোমান্টিক বর্ণনা আছে সেখানে। ইজরায়েল পাসপোর্টে না থাকলেও, ইউটিউবের যুগে ইজরায়েল ভ্রমণ সম্ভব। আল জাজিরা বা বিবিসি/সিএনএনও আপনাকে তাদের মতন জেরুজালেম নিয়ে যাবে, পর্যটকেরাও নিয়ে যাচ্ছেন। ইজারায়েল নাই বললেই তো আর নাই হয়ে যায় না।

"দ্রাক্ষালতা, জর্ডাননদী, কাঠ, কাঠবাজার
কাঠবাদামের গাছ, গ্যালিলির সমুদ্র, ঝাঁকাভরা
মাছ, মাছবাজার, ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে
প্রতিশ্রুত স্বপ্নভূমি।"

আমাদের কল্প জগতের আর বাস্তব জগতের ইজরায়েল বা জেরুজালেম ভিন্ন। এর মধ্যে পশ্চিম তীর আর গাজা এই দুই মোটেও রোমান্টিক না, পুরোপুরি রগরগে বাস্তব। ইজরায়েল পার্লামেন্ট, তাদের ফুটবল দল, তাদের খৃষ্টান ও মুসলিম জনগণ, গণতান্ত্রিক রীতিপদ্ধতি, তাদের জাতীয়তাবাদ, বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ, গোলান উপত্যকা, অবশিষ্ট প্যালেস্টাইন ও তার বাসিন্দাগণ, সেটেলার ইত্যাদি ইত্যাদি অভিনব। ইতিহাসের তুলনায় এর অভিনবত্ব হয়ত খুব বেশি না। আর অভিনব অনেক কিছুই হয়ত এই মুহূর্তে ঘটছে, গাজা বা পূর্ব জেরুজালেমের সংযুক্ত ভূখণ্ডেই পাওয়া যাবে। হয়ত কোনো এক পরিচয়ের সূত্রে গেঁথে ফেলা কঠিন না।

পরিচয় নিয়ে দারবিশের একটা কবিতা আছে। কি আপনার পরিচয়? প্যালেস্টাইনের মানুষ? আরব? ইজরায়েল ভূখণ্ডের মানুষ? মুসলমান / খ্রিস্টান / ইহুদী? পরিচয় মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, হাজার হাজার বছর ধরে। এখনো, কোথায় পরিচয়ের যন্ত্রণা নেই? রাজনৈতিক সংখ্যাগুরু বা ক্ষমতা বলয়ের বাইরে যে কোনো ভূখণ্ডে বা এই বিশ্বে এমন কোনো "পরিচয়" আছে যা আমাকে আপনাকে নিরাপত্তা দিবে? কিংবা গ্লানিহীন রাখতে সক্ষম হবে? মানব পরিচয়? সে তো অনেকে মানতেই রাজি না। তাহলে কিসের মধ্যে পরিচয় খুজছি আমরা?

এই পরিচয় খোঁজ করা অবশ্য অনিবার্য, বৃহত্তর দোহাই, ক্ষুদ্রতর দোহাই, আপাত দোহাই ইত্যাদি আছে। খুব সহজে যদিও মীমাংসা হতে চায় না। তবে আপাত প্রশ্নটি দ্ব্যার্থহীন হওয়া চাই। সেটি হলো, প্যালেস্টাইন রক্ষা পাক, রক্ষা পাক গাজা, পশ্চিম তীর ও সেখানকার মানুষ । শান্তি খুঁজে পাক ইজরায়েল।



Sunday, October 25, 2020

যেভাবে আমরা মধ্যবিত্ত জীবনকে মেনে নেই


এক স্নিগ্ধ আলস্য
ভর করে পুনরাবৃত্তির কাঁধে
সাথে প্রতিভার স্মৃতি
উপরের পাটি ক্ষয়ে ফেলা
বাছুরটি এই দুনিয়ার চক্করে
দৌড়ে খুঁজে ফেরে
সর্বশেষ গোমেধ
যজ্ঞের আগুণের ওম

—————

আমরা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে বিরাজমান থাকতে চাই, অথচ আমাদের প্রতি অঙ্গ প্রতিনিয়ত এই দায়িত্ব ছেড়ে পালাতে চায়। ব্রহ্মাণ্ডের মালিক কারণার্ণবে শুয়ে শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকেরা নানান প্রকার ধর্মঘট ভাংচুর করছে, বলছে, দুনিয়ার মজদুরে এক হও। কিন্তু বিশ্বাস মিলে না। মেলার কথাও না, যারা নিয়ম-কানুন বানায়, তারা বলে, মালিকের খেলা সব। এক আর হয় না। ঊন সকলের নিয়ত ও নিয়তি ঐ ব্রহ্মাণ্ডে বিরাজ হতে চাওয়া পর্যন্তই।

—————

ব্যক্তি বা বিষয়ের জালে আটকা হয়ে ব্রহ্মান্ডের পানে ঝুলে থাকাই যদি নিয়তি হলো, হাত পা ছোড়াছুড়ি করে দেখা যায়। তাতে হয়তো জাল আরো ছড়াবে, মহাকর্ষ আরো ডুবিয়ে দিবে তার বক্র-পাঁকের মধ্যে।

—————

যে পথে যাওয়া হয় নি
যে পথে যাওয়া হলো
যে পথ ভাবা গেলো
যে পথ ভাবাও যায় নি

এই সকল ভাবনার ব্যকরণে
পদের শৃঙ্খলা ও বিদ্রোহে
শব্দগুলির ফাঁকে ফাঁকে
অনুচ্চারিত নীরবতার মধ্যে
পতিত ভূমির কাছে
আদর্শ ফসলের আকাঙ্ক্ষায়
অবাধ্য উড্ডয়ন কিংবা
উন্নয়ন শ্রম হয়ে বেঁচে থাকা

পথগুলি অনন্তর দীর্ঘশ্বাস।


Friday, June 19, 2020

উন্মোচন

হাদিস বয়ান

মহম্মদ কইলেন, মার্কস কইলেন,
বিজ্ঞান কইলো, "বাপরে বাপ!"
অন্ধে কয়, দেখছি সবই,
মিল্লা গেছে খাপে খাপ।



এবং বিপরীত ক্রমে

তুমি বললে “মাছ”,
অমনি নীল জলে ডুবে গিয়ে
স্বপ্নের মধ্যে ছুটতে চাইছে মন;
মত্স্যগন্ধা! বললে, “পাখির মতো”,
তোমায় ডানায় মুখ গুঁজে
ঘুমের মধ্যে সাঁতরে চলেছে,
বাবুই পাখি! তুমি বললে, “একা”…!

আমি ভাবলাম, তুমি কোনো এক সুদূর অতীতের কথা বলছো।



মানবিক কাফেলায় ঈশ্বর

যীশুপত্নী ম্যারি ম্যাগডালিনা,
আমার প্রেমিকা তিনি অথবা রাধিকা
অথবা অন্য কোন প্রেরিত পুরুষের
কেনা দাসী কিংবা পরিত্যাক্তা
তাতেও হবে, উহাদের প্রেমময়
বিহবলতা, আমার চক্ষে-মুখে
আনুক পরধর্মে সহিষ্ণুতা
ওরফে সেকুলারিজম!




প্রিয় কবিতা প্রজেক্ট

রাষ্ট্রপতি বললেন তার প্রিয় কবিতার কথা
সেই সাথে ইমিগ্র্যান্ট গৃহবধু, রোমানি
যাযাবর, যে সবে সংস্কৃত ভুলে
মায়া বলতে শিখছে, ওয়াল মার্টের
দই অলা ছুকরী, বাবার হাত ধরে
সাইকেল বন্দুক চড়া বিচ্ছুটা, সকলেই,
এমনকি, পিনস্কির জাতা খেয়ে
স্ট্যাচু অফ লিবার্টিও, ঘোমটা খুলে
বেঁচে দিল তার প্রিয় কবিতা - পুঁজিবাদ!



নন্দিনী

তোমার মধ্যে একটা নক্ষত্র আছে
নাম তার চিত্রা; সত্য গ্রহ, কবি
মিথ্যা বলে না, মেয়ে শোনো, স্বচ্ছ
তোমার চোখের মনির ঝর্ণাতলায়,
মাথার খুলির অসারতা, বিম্বের
প্রতিধ্বনি, নৈঃশব্দ তার সুরে,
ডেকে, বলছে, "ভালোবাসি!"
আশ্চর্য্য সে দেশে গেলে, রূপকথা নিয়ে;
পৃথিবীকে সে করে নি কো অধিকার
দুদন্ড মেলানোর চেষ্টাও নয়, চমকে
চমকে ধরা দিবে চপলা, চপলে চকিতে
প্রেম-ঈশ্বরধাঁধা-অতীত-ভবিষ্যত,
যদিও অর্থহীন, তবু হৃদয় চাইছে
অন্তহীন আলস্য একক বর্তমানের।

---------------------------------

নাস্তিকের প্রেম

নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা?

এমন করে তো আগে ভালোবাসি নাই;
তবু মনে পড়ে-
মৃত্যু আমাকে নতুন কিছু দেয় নাই।
আমি শুধু জেনেছি-
আমি মরণকে ভালোবাসি;
মায়া-বিভূতি; নিত্য-সন্দর্শন
অমনি অগণিত প্রেমিক
যারা পেয়েছিল স্পর্শ, অবসাদ-ক্লান্তি, সঞ্জীবনী
তাদের কবিতা, গান, আত্মহত্যার মতন তীব্রতর প্রেম,
মৃত্যুও দিয়েছে তাদের ঢের!
আমার সমান্তরালে, তনুশ্রী
তুমি চলে গেছো, আমি খুঁজি মৃত্যু
তোমার ছায়ার পিছে পিছে
কোনোদিন যদি সে ভালোবাসে।

----------------------------

প্রেম নিহিলো

রং নেই, সুন্দর নেই, আছে শুধু ভনিতা, বলি ভালবাসি, তুমি বলবে, সে কি অর্থহীন? আমি বলি এই, যে কাকতাল, এটাই প্রেম, এর পর- পেন্সিল, কাঁটাতার, এরোপ্লেন, মরুভূমি। যতদুর যাক, ঠাঁয় থাকে, এক ভালবাসা, ভয়হীন ভালবাসা| যে ভয় পায়, সে প্রেমিক নয়, লম্পট-প্রতারক-ধর্ষক-কামুক, তুমি বেছে নাও, রং, নীল কি গোলাপী? তুমি বেছে নাও, প্রেমিক বা কবি, অথবা আহত, প্রেমিক, ল্যাংড়া কবি, কিংবা দুটোই, তুমি করো। তুমি গড় নিজ হাতে। ভালবাসা, রং তুলি, তোমার ইচ্ছে মতন, সচেতন, প্রেম গড় , ভাসিয়ে দিও না, এই প্রেম, এই নরক-বাজারে! আমি ই তোমার প্রেমিক! যদিও হতে চায় রং নীল। অধিকারবোধ চায়, ফিরে যায়, বলেঃ “পৃথিবী সুন্দর নয়, যা কিছু সব সুন্দরের ভনিতা “ ভালবাসা অপ্রকৃতস্থ, একটি পবিত্র নাম সেও ভালবাসা, প্রকাশের যাতনায়, সংশয়ের অন্তর্ধানে সেও ভালবাসা, তুমি নেই? যে ছিলে- বিগত প্লাবনে- তোমাকে পায় না
তোমাকে হারায়
তোমাকে হারায়
তোমাকে হারায়...


সন্ত্রাসীর মৃত্যুতে এলিজি

খুন থেকে শুরু, ওখানেই শেষ,
মাঝে কিছু গাঁজা-মদ-ফেন্সিডিল
জুয়া আর নারী ব্যাবসায়,
পিচের রাস্তায় গর্ত খোড়াখুড়ি
শিশু-মাতৃসদন, বিদ্যানিকেতন,
নগরের সৌন্দর্য বর্ধন, ও সীমিত
চাঁদাবাজির অভিযোগ, সাধু!
তোমার নামেই হুলিয়া, তুমিও
অনেকের নামে, এখনো ঝুলিয়া
আছে উহাদের মৃত্যুর পরোয়ানা,
তোমার মৃত্যুর পর তারা কি মুক্ত,
এরপর?
আবার নতুন করে বাসে-
ট্রেনে ভাঙচুর- জ্বলুক আগুন,
নতুন খুন, নতুন মাস্তান, নতুন
রাজনীতির উদ্বোধন, ছেলেরা
শুনেছি খেলছিল কলেজের মাঠে,
বল ফেটে ককটেল, ব্যাট চিরে
রামদা! শপথ আমার এই রাষ্ট্রের,
এদেরই পড়াবো স্বর্ণটীকা! গত
বার তোমার নামের পোষ্টার
হয়েছিল, 'মুক্তি চাই' 'ফাঁসি
চাই', বিচার-মুক্তি-ফাঁসির পৌনঃপুনিকতার
অবসান আবারো হবে পিস্তলের গুলিতেই!

[খবরে প্রকাশঃ নরসিংদীর পৌর মেয়রের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন ধরালো সমর্থকরা]


স্মৃতিস্মর

তুমি কি দেখো?
ইঁদুর-পাহাড়-খল-খল-প্রপাত
হাঁসুলি বাঁকের বক
হ্রদের জলে চুমু খেয়ে
উড়ে যাচ্ছ তুমি,
আমি যাচ্ছি তলিয়ে,
তোমার মচ্ছবের শোকগাঁথা
আমাকে শোনাবে বলে ডাকছে
পরজীবী-আগাছা-প্ল্যাংক্টন
শতবছরের শৃঙ্খলে
যারা ভুলতে বসেছে
সোনালী খাদ্য- নির্বাণ!

লকডাউন


প্রতিদিন ছাদে হাটি
করোনারি গতিশীল
কেউ কেউ দৌড়ায়
ঝাঁঝরির জলে লোভী
কাক পাথর কুড়োয়
তার অরুচির ঠোঁটে

আমাদের টবগুলিতে
প্রচুর অলস আগাছা
অক্সিজেনের দোহাই দিয়ে
বাঁচিয়ে রেখেছি এই
ফুল ও সবজির পৃথিবীতে

মিতব্যায়ী ঘুড়ি
ঝড় বিদ্যুতে 
রোদের ঝলকে
সাবধানী সুতো
ঢিলে টানে  ধরা থাকে
মধ্যবিত্ত বাজারের থলে

তিনপদী বিড়ালের
ছানাগুলি বসে আছে
ইলিশের অপেক্ষায়
পাঁচালী বন্ধ করে
হামাগুড়ি দিচ্ছি সবে
সজল সমাধিপানে

শ্যাওলার বট
দেয়াল চিড়তে পারেনি তাই
মিছে পার্বণে
যুবকযুবতীরা,
বাল ও বৃদ্ধেরা
তুলি  স্থান ও কালের
অলঙ্ঘ্য সসীমতার
যত্নশীল সেলফি




বিশ্বজিৎ

হেই খলিফা!
পৈতা সিলাও
শূন্য পিঠে
রক্ত ঝোলাও

হায় খলিফা!

চলছিল যা
ডুববে কি তাও?
ঘোর কলি কেন
জানতে কি চাও?
অন্ন পাবে
জাতটা বাঁচাও।

২২ -১১- ২০১৩